উত্তরাধিকার প্রশ্নে নারীর প্রাপ্য। একটি শিক্ষণীয় গল্প।

Spread the love

নুসাইবা মায়ের সাথে বসে আছে। সাধারণত মায়ের সাথে সময় দিতে পারতো না সে। মায়ের থেকে যত দূরে থাকতে পারতো ততোই মঙ্গল—ভাবতো। সামনে পেলেই এটা-ওটা বলতে থাকে। বুঝাতে থাকে। নুসাইবার এসব বিরক্তিকর ঠেকে। তাই দূরে দূরেই থাকতো নুসাইবা। কিন্তু আজ কেন জানি মায়ের পাশে বসতে ইচ্ছে হচ্ছে। কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে। মা সেই ছোটো থেকেই চেয়েছে মেয়েটাকে নিজের মতো বানাতে। কিন্তু পারেনি। নুসাইবার বাবাকেও ছেড়ে যেতে পারেনি। এভাবেই কাটিয়ে দিয়েছে জীবনের প্রায় পুরোটা সময়।

নুসাইবা বড় হয়েছে। আশা ছিলো বড় হলে যদি কিছু বুঝে। কিন্তু সে আশায়ও গুঁড়োবালি। সেও হয়েছে বাবার মতোই। কষ্টের পাল্লাটা আরও ভারি হয়ে গিয়েছিলো মায়ের। কিন্তু আজ হঠাৎ নুসাইবার পরিবর্তনে মা ভীষণরকম আনন্দিত হয়েছে। এমন আনন্দিত তিনি ইতোপূর্বে কখনও হয়েছেন কিনা—মনে নেই। তবে আজকের আনন্দটা ভিন্নরকম। নুসাইবা মায়ের কুলে মাথা রেখে শুয়ে আছে। হঠাৎ একফোঁটা তপ্তশ্রু নুসাইবার গালে টপ করে পড়লো। নুসাইবা চোখ খুলে আবার বন্ধ করে নিলো। সাথে মাকে আরেকটু কাছে টেনে নিলো।   

নুসাইবার মামা বোনের ওয়ারিস সূত্রে পাওয়া জমির কাগজপত্র পাঠিয়েছে। কিন্তু নুসাইবার বাবার পছন্দ হচ্ছে না। কারণ, যা পেয়েছে তা ছিলো নুসাইবার মামার অর্ধেক। তাই তিনি যথেষ্ট রাগান্বিত। তার সাথে যোগ হয়েছে নুসাইবার বোরকা পরে ভার্সিটিতে যাওয়া। সবমিলিয়ে পরিপক্ব রাগান্বিত। আর তার রাগ উঠলে মুখ দিয়ে যে কী বের হয়—তিনি নিজেও জানেন না।

—আচ্ছা তোমার ভাই তোমাকে তার অর্ধেক সম্পত্তি দিলো কেন?
—মুসলিম আইন অনুযায়ী তো তাই দেওয়া হয়। অনেকের ভাইয়েরা বোনদের তো কানাকড়িও দেয় না।

—রাখো তোমার মুসলিম আইন। আর তুমিও কেমন পড়ে আছো সেই চৌদ্দশো বছর পুরনো আইন নিয়ে। দেখো দুনিয়া কত এগিয়ে গেছে। আর তুমি সেই পুরনো নিয়ম অনুযায়ী অর্ধেক সম্পত্তি নিয়েই খুশি।
—আমি মুসলিম। ইসলামের রীতি সবসময়ই আমার জন্য অপরিহার্য—পুরাতন বা নতুনে কিছু যায় আসে না। আর ইসলামের সকল বিধানই মানুষের জন্য উপকারী। সবসময়ই ন্যায্য।

—ভাইয়ের অর্ধেক বোনকে দেওয়া—এটা খালি চোখেই দেখা যাচ্ছে জুলুম। আবার তুমি বলো সবসময়ই ন্যায্য। হাস্যকর। এই তোমার ধর্ম?
—খালি চোখে দেখছো বলেই বুঝতে পারছো না এটাই সঠিক। আচ্ছা বাবা, তুমি তো বিয়ে করেছো এই শর্তে—আম্মুর ভরণ-পোষণের সব দায়িত্ব তোমার। যতো প্রয়োজন; তুমি মেটাবে। কিন্তু তুমি এখন কেন তার সম্পত্তি নিয়ে এতো মাথা ঘামাচ্ছো?
নুসাইবা আস্তে আস্তে কথাগুলো বললো।

—এই বেয়াদব মেয়ে, তুই কেন কথা বলছিস? বড়দের মাঝে কথা বলার সাহস কোথায় পেলি? পড়ালেখা করে বেয়াদবি শিখছিস? ধর্মের নামে এসব ভণ্ডামির কথা না বলে, নিজেও ভণ্ডামি শুরু করেছিস। নির্বোধ মেয়ে কোথাকার!
—বাবা দেখো, ইসলাম নারীদের জন্য একটা নিয়ম করে দিয়েছে। যাতে তারা এবং তাদের পরিবার সুখি হয়।

নারী যখন মেয়ে তখন তার সকল চাহিদা মেটানোর দায়িত্ব বাবার। যদি বাবা না থাকে তাহলে বড়ভাইয়ের। বড়ভাই না থাকলে চাচা, দাদাদের। দায়িত্বশীল করে দেওয়া হয়েছে কাউকে না কাউকে।

যদি স্ত্রী হয়, তখন তার সকলকিছুর দায়িত্ব বর্তায় তার স্বামীর উপর। স্বামী মারা গেলে ছেলের উপর। ছেলে না থাকলে শশুর-শাশুড়ির উপর।

এভাবে নারীর নিজের অর্থসম্পদ খরচ করার কোন প্রয়োজনই হয় না। যেমন, আম্মুর সকল দায়িত্ব এখন তোমার উপর। আম্মুর নিজের খরচ করার কোন প্রয়োজন নেই। তাহলে আম্মু সম্পদ দিয়ে কী করবে?
তারপরও যেকোনো বিপদে আম্মু যেন নিজের ব্যবস্থা নিতে পারে। সেজন্য আল্লাহ তাআলা নারীর উত্তরাধিকার দিয়েছে।

—তুই যে বললি—‘বাবা, ভাই, স্বামী নারীর খরচ বহন করবে।’ যদি তাদের কেউ-ই না থাকে, তখন একজন নারীর বেঁচে থাকার ব্যবস্থা কে করবে? প্রয়োজন পূরণ কে করবে?
—বাবা ধরো, আমি ওই অবস্থায় পড়লাম। আমাকে দেখার মতো কেউ-ই নেই। সুতরাং তোমার সম্পত্তির কোনো উত্তরাধিকারই নেই; আমি ছাড়া। তখন তোমার সকল সম্পত্তিই আমার হবে। আমি ছাড়া তো আর কোন উত্তরসূরি নেই তোমার। তাই তোমার সকল সম্পত্তিই আমার। তখন তো আর সমস্যা নেই।

একজন নারী কীভাবে থাকবে, কেমন থাকবে—সকল কিছুই আল্লাহ তাআলা ঠিক করে দিয়েছেন। এবং স্রষ্টা হিসেবে তিনিই সবচেয়ে ভালো জানেন। জানেন কিসের মধ্যে কার সুখ।

তাই সেকেলে, পুরনো, এসব বলে সঠিক বিষয়টাকে এড়িয়ে যাওয়া ঠিক না—কারোর জন্যই। বরং সেটাকে আরও আঁকড়ে ধরা প্রয়োজন। কারণ তাতেই কল্যাণ। তাই সেকেলে বলে ইসলামের বিধানকে পরিহার করাও অজ্ঞতা। 

—তুই তো দেখি অতিরিক্ত বেয়াদব হয়ে গেছিস। যা এখান থেকে। না হয়…
—বাবা, তুমি আমাকে বকছো। আমি শুনছি। কারণ এখন কথা বললে, এটা আমাদের সম্পর্ক নষ্টের কারণ হবে। এজন্য ইসলাম একজনকে প্রাধান্য দিয়ে, পরিবারের সকলের দায়িত্ব তাকে অর্পণ করেছে। অন্যদেরকে আনুগত্য করতে বলেছে; যাতে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুখে থাকতে পারে। আর তোমরা এটাকেই নারীর অধিকার হরণ বলে চালিয়ে দিচ্ছো। এটাই তোমাদের আধুনিক মানসিকতা।

আর দেখো, এই যে পরিবারের এতো বড় দায়িত্ব তোমাকে দেওয়া হয়েছে। এটার জন্য তোমাদের অবশ্যই টাকাপয়সার প্রয়োজন আছে। যেটা তোমার বোনের নেই। সেজন্য আল্লাহ তোমাকে বেশি নিতে এবং বোনকে অর্ধেক দিতে বলেছে। এটা তো কোনোভাবেই অন্যায় মনে হচ্ছে না। তুমি আমাকে ব্যাখ্যা করবা—কীভাবে এটা জুলুম হলো?

—তুই যা এখন, না হয়… ধূর…

নুসাইবার বাবা নিজেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন।

✒️ আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ

About the author
Fawzul Kabir

Leave a Comment