সভ্যতা বিনির্মানে করণীয়

Spread the love

  ইসলামের বিজয় ও সভ্যতার বিনির্মানে সংস্কৃতির ভূমিকা তরকারিতে ব্যবহৃত একটি অবশ্য উপাদান লবনের মতো। ইতিমধ্যেই যেখানে কথিত বাঙ্গালী সংস্কৃতির নামে পাশ্চাত্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি ধীরে ধীরে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করে আছে তখন বিষয়টি অবশ্যই আশংকার এবং চরম কঠিনতম কাজের একটি। প্রশ্ন হচ্ছে, এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার উপায় কী? পাশ্চাত্যের করাল গ্রাস থেকে মুক্তির পথ কোথায়? আমার দৃষ্টিতে এখানে সম্ভাব্য সমাধান ৩টি।

১. প্রজন্মকে চলমান সংস্কৃতির যোগ্য বিকল্প প্রদান।
২. প্রজন্মের চিন্তা ভাবনা ও রুচির আমূল পরিবর্তন। 
৩. শর্তসাপেক্ষে আদি বাঙ্গালী সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ।

প্রথমটার বিষয়ে বলব, এই সেক্টরে শরয়ী সীমার ভেতরে থেকে প্রচুর কাজ করতে হবে। প্রচুর মানে হিউজ পরিমান কাজ করতে হবে। শুধু তাই নয়, কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরি করতে হবে। বর্তমানে যারা খুটি গেড়ে বসে আছে তাদের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে হবে, তাদেরকে সম্পূর্ণ উৎখাত করতে হবে।
.
এক্ষেত্রে বলব, গানের পরিবর্তে নাসীদের ব্যাপক প্রচলন করা যেতে পারে। গানে আসক্ত কেউ হুট করেই গান হারাম শুনেই বেঁকে বসবে। কিন্তু তাকে গানের যোগ্য বিকল্প দেখাতে পারলে পরিবর্তন আশাকরা যায়। আমি মনে করি, যারা সদ্য এমন গানের জগত ত্যাগ করে দ্বীনে ফিরেছেন, এবং যথেষ্ট ফেস ভ্যালুও আছে তারা এখানে ভাইটাল রোল প্লে করতে পারেন।

একটি বিষয় খেয়াল করুন, একজন সাবেক শিল্পী যখন তার সেক্টর ছেড়ে চলে আসে ফলে কিন্তু সেটা একেবারে বন্ধ হয়ে যায় না। তার কার্যক্রম পুরোদমেই চলতে থাকে। সেই হারামের বাঁধনে বাঁধা পড়ে থাকে অগণিত প্রাণ। সে নিজে চলে আসার ফলে সে হয়ত হারাম থেকে বেঁচে যায় কিন্তু উম্মাহর যে বৃহৎ কোনো লাভ হয় এমনটা নয়। অর্থাৎ মূল সমস্যার কোনো সমাধান হয় না। এজন্য আমি মনেকরি, সাবেক শিল্পীদের সেই সেক্টরটাকে হারামের উপর ছেড়ে দেয়া অনুচিত। তাদের উচিৎ শরয়ী সীমা জেনে নিয়ে কোয়ালিটি কন্টেন্ট তৈরি করা।

এক্ষেত্রে প্রশ্ন হতে পারে, যুবসমাজকে সিনেমার স্থলে কী দিবেন? এইটা খুবই ভাইটাল একটি পয়েন্ট। এক্ষেত্রে একটি অপশন হতে পারে, ‘বই’। এক্ষেত্রে যুগের চাহিদা মোতাবেক ইসলামী ধারার সাহিত্যিক বই প্রোভাইড করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন সাহিত্যকে শক্তি হিসেবে গড়ে তোলা। প্রচলিত সেক্যুলার সাহিত্যকে চ্যালেঞ্জ করা। সত্যি বলতে, সবাই কিন্তু বই পড়বে না। তাকে তার প্রয়োজন অনুযায়ী কন্টেন্ট প্রোভাইড করতে হবে। আমি অধম ভাবছি, আরও অনেকেই এই সকল বিষয়ে ভাবছে। আপনিও ভাবুন, আপনার ভাবনা শেয়ার করুন। অনেক ডিপ থিংকিং প্রয়োজন। সকলেই ভাবুন। সকলে ভেবে সম্ভাব্য সমাধান বের করুন।
.
আপনি আমি সকলেই সেক্যুলার সমাজের অংশ ছিলাম।সেই সেক্যুলার থাকাকালীন এই বয়সে সিনেমার বদলে কী পেলে মেনে নিতাম? এইভাবে চিন্তা করুন। তবে হ্যাঁ, আরও একটা অপশন হচ্ছে যুবক অবস্থায় বিয়ে। আমার বিশ্বাস এটা খুবই ইফেক্টিভ হতে পারে। এমনভাবে ভাবতে থাকুন, আরও বের হবে। চিন্তা না করলে মুক্তি নাই। চিন্তা করুন…
.
এটাতো গেলো তরুনদের কাহিনী। শিশুদের কী করবেন? খেলার মাঠ অথবা কন্টেন্ট দুটোর একটা তো দিতেই হবে। এছাড়া আর কোনো ওয়ে নেই। এক্ষেত্রে আমি মনে করি মাঠ অনেকটা সেফ জোন। তবে শহরাঞ্চলে এটারও তীব্র সংকট। এর সমাধান কীভাবে করবেন, কারা করবেন, সেটা নিয়ে সকলের ভাবা উচিৎ। প্রজন্মকে বাঁচাতে বিশেষ করে প্রতিটি সমাজের অরাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের এই বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। অরাজনৈতিক বললাম কারণ, রাজনৈতিক নেতারা শুধু রাজনীতিই করে। আশাকরি, বুঝতে পেরেছেন।
.
শিশুদের জন্য আরেকটা একটা সুন্দর সমাধান হতে পারে অসাধারণ কিছু বোর্ড গেম (নট অনলাইন) আবিষ্কার করা। যা তাদের প্রতিনিয়ত নতুন কিছু জানতে উপভোগ করতে শেখাবে। আর এই দিকে কন্টেন্টের চাহিদাও পূরণ হবে। গবেষণা করুন, প্রচুর গবেষণা।
.
দ্বিতীয় পয়েন্ট, প্রজন্মের চিন্তা ভাবনা ও রুচির পরিবর্তন। সত্যি বলতে এটা অনেক কঠিন কাজ। আমার মনে এটা করতে দাওয়াহর জগতে একটা বিপ্লব নিয়ে আসতে হবে। আমাদের সমাজের গতানুগতিক দাওয়াহর সিস্টেম থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে স্ট্রিট দাওয়াহর মতো বিষয় খুব ইফেক্টিভ হতে পারে।
.
স্ট্রিট দাওয়ার মতো তাবলীগও অনেক ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। দাওয়ার ফিল্ড সংস্কার করতে তো বাধা নেই। সুতরাং চিন্তা করুন। ভাবুন। চলমান দাওয়াহ ফিল্ডগুলোর ভুলভ্রান্তি ছুড়ে ফেলুন। যুগের প্রয়োজন অনুযায়ী সকল কিছু নতুন করে ঢেলে সাজান। পরিবর্তন আসবেই। আল্লাহ চাইলে অবশ্যই আসবে। শুধু প্রয়োজন বান্দার সদিচ্ছা ও চেষ্টা। অর্থাৎ উদ্যোগ গ্রহণ।
.
অন্যদিকে বখে যাওয়ার বয়সে, সমাজের তরুণরা বখে যাওয়ার আগেই বিয়ে দিয়ে দিলেও ফোকাস অন্যদিকে মুভ করবে। সঠিক সময়ে বিয়ে আসলে বহুমুখী সমস্যার সমাধান। তবে আমরা আইন করে সেটা অবরুদ্ধ করে রেখেছি। হারামকে সহজ করে রাখার ফলে হালাল কঠিন হয়ে গিয়েছে। ফলাফল, অন্ধকার গলিতে ডুবতে বসা তরুণ প্রজন্ম।
.
এর বাইরে আমার মনে হয়, কিশোর বয়স থেকে সকলকে ফিজ্যিক্যাল খেলাধুলার সুযোগ দেয়া উচিৎ। এই কিশোরদের প্রযুক্তি থেকে তো দূরে রাখা যাবে না তবে যদি সম্ভব হয় তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। কোনোক্রমেই তাদের প্রযুক্তি আসক্ত হতে দেয়া যাবে না। অভিভাবকের আরও সচেতন হতে হবে। পিতামাতার সন্তানকে নিয়মিত তদারকি করতে হবে।
.
তৃতীয়ত, মূল বাঙ্গালী সংস্কৃতি এডপ্ট করা যেতে পারে। শর্তসাপেক্ষে বললাম কারণ, আমাদের শরয়ী সীমারেখার বাইরের খারাপটা ছুড়ে ফেলে ভালোটা গ্রহণ করা যেতেই পারে। পাশ্চাত্যের তৈরি কন্সেন্ট, বৈবাহিক ধর্ষণ, এল জি বি টি ইত্যাকার পরিস্থিতি থেকে অন্তত কথিত নয়, সত্যিকারের বাঙ্গালী সংস্কৃতি ঢের অনেক ভালো। সেখানে সামান্য সমস্যা হয়ত থাকবে, তবে পাশ্চাত্যের মতো অযাচিত, অকল্পনীয়, কুরুচিপূর্ণ সমস্যাগুলো থাকবে না। এটাও একটি সমাধান হতে পারে। এক্ষেত্রে বর্তমানের কথিত বাঙ্গালী সংস্কৃতিকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। বর্তমানে যা হাজার বছরের বাঙ্গালী সংস্কৃতি হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে তার ভিত্তিকে প্রশ্ন করতে হবে। সত্যিকারের সংস্কৃতি সকলের সামনে উন্মোচন করতে হবে। 
.
এদেশে একাত্তর পরবর্তী সময় থেকে চলে আসা চলমান সাংস্কৃতিক আগ্রাসনকে যেকোনো মূল্যে রুখে দিতে হবে। ইসলামিস্টদের এখনও প্রচুর পথ চলা বাকি, অনেক চড়াই-উতরাই এখনও পাড়ি দেয়া বাকি। এক্ষেত্রে অসুস্থ সংস্কৃতির উৎখাতের মাধ্যমে সুস্থ সভ্যতার দ্বার উন্মোচিত হবে। ইন শা আল্লাহ। 
.
অপ্রিয় কথনঃ আমার কেন যেন মনে হয়, আমাদেএ সিনিয়র জুনিয়র লেখক ও দাঈরা যে কাজ করছে সেগুলো অনেক। কিন্তু সেই কাজগুলো সঠিক স্থানে পৌঁছাতে পারছে না৷ আপনি দ্বীন বোঝেন ও মানেন। অন্তত দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিধিনিষেধগুলো মেনে চলেন। অথচ আপনারাই সেই সকল কন্টেন্ট কনসিউম করেন।
.
নিজের প্রিয় লেখককে ভালো লিখেছেন, সুন্দর লিখেছেন। মাশা-আল্লাহ, বারাকাল্লাহ জাতীয় অনেক কম্পলিমেন্ট দিলেই কী আপনাদের কাজ শেষ? যারা লেখার তারা লিখছে, তাদের দায়িত্ব তারা পালন করছে। এবার ঠাণ্ডা মাথায় ভেবে দেখুন, তারা কী তেলা মাথায় তেল দিতে এসেছে? আসেনি। তারা দাওয়াহ দিচ্ছে যারা দ্বীনের বুঝ পায়নি তারা যেন দ্বীন সম্পর্কে জানতে পারে। কিন্তু তারা কী তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছে? না।
.
একজন লেখক তো আর ইসলামের প্রতি সফট কর্ণার থাকা সেক্যুলার লিবারেল মুসলিমদের কাছে পৌঁছাতে পারে না। এক্ষেত্রে এই কাজগুলো সেখানে পৌঁছে দেয়ার দায়িত্ব কার? অবশ্যই আপনার। দ্বীনের খেদমতে, দাওয়ার নিয়্যাতে আপনার উচিত এই কাজগুলো করা। নইলে শুধু শুধু তেলা মাথায় তৈল দিয়ে কোনো লাভ নেই।
.
এই যেমন উপরে আমি বেশকিছু পরামর্শ দিলাম। আপনারা সেগুলো শুনে আমার প্রশংসা করলেন। এতে কী উম্মাহর কোনো লাভ হবে? হবে না। সেই পরামর্শ অনুযায়ী কোনো উদ্যোগ নিয়ে তার পেছনে সময় দিলে লাভ হবে। প্রিয় ভাই, তবে সেটাই করুন না। আমাদের উৎসাহ দিচ্ছেন, দিন। এতে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু আমরা যা বলছি, সেটা নিয়ে ফিকির করুন, গবেষণা করুন। কিভাবে এই অবস্থার পরিবর্তন করা যায় সেগুলো নিয়ে আপনিও ভাবুন।
.
অবশ্যই অবশ্যই অভিনব সব উদ্যোগ গ্রহণ করুন। আপনি চেষ্টা তো করে দেখুন, সফলতা আল্লাহ দিবেন। আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তো আল্লাহ চাইলে বিনাযুদ্ধে জিতিয়ে দিতে পারতেন। ইচ্ছা করলেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ক্ষমতাধর মানুষ বানাতে পারতেন। কিন্তু না, তিনি চেষ্টা করেছেন। আল্লাহর সাহায্য এসেছে এবং তিনি সফল হয়েছেন।
.
আপনি ধৈর্য সহকারে সেই চেষ্টাটুকুই করুন না। উদ্যোগ নিন। উদ্যোগ নিন। দ্বীনি নাসিহাহ ও দাওয়াত তাদের কাছে পৌছে দিন যাদের তা অনেক বেশি প্রয়োজন।
______________________
সভ্যতা বিনির্মানে করণীয় 

লেখাঃ সাবেক কিংকর্তব্যবিমূঢ়

About the author
Fawzul Kabir

Leave a Comment