রিযিক নিয়ে ছোট গল্প

Spread the love

খুব খুদা লাগছে।
পকেটে আছে মাত্র চল্লিশ টাকা ।
দশ টাকা রিক্সা ভাড়া আর দশ টাকায় এক প্লেট ভাত আর বিশ টাকার না হয় ভাজি আর যে কোন একটা ভরতা।
না যেকোন একটা খেতে হবে কারণ কালকে আরেকটা চাকরির ইন্টারভিউ দিতে যেতে হবে ।
অবশ্য আমার মেস থেকে কাছেই।

হেটেই যাওয়া যাবে ।
তবুও দশ টাকা পকেট রাখা ভালো।
একেবারে খালি থাকলে কেমন দেখায় না ?
এসব ভাবতে ভাবতেই রাফান এর কানে ভেসে আসলো সুরলিত কন্ঠের আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার মানে যোহর এর নামাজ এর আযান।

রাফান ভাবলো চাকরি না হোক।
আল্লাহর ইবাদত তো করতে হবে।
হয়তো চাকরি না হওয়াটাই আল্লাহ তায়ালার একটা পরীক্ষা।
কারণ, সুরা বাকারায় তো আল্লাহ তায়ালা বলেই দিছেন ।
আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।

অফিস থেকে বের হয়ে সোজা মসজিদে চলে গেলো রাফান ।
নিজের নফসকে কোন অজুহাত দেওয়া যাবে না।
তাই রাফান খুজে বের করলো অজু খানা ।
অজু করে মসজিদ এর বারান্দায় দাড়িয়ে গেলো সুন্নাত আদায়ে ।

আপনাদেরকে তো রাফান এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হইনি ।
রাফান গ্রাম থেকে এসেছে চাকরির খুজে।
চাচাতো ভাই এর মেস এ উঠেছে আপাতত।
যে কোন একটা কোম্পানিতে ভালো সেলারির বেতন পেলেই আলহামদুলিল্লাহ ।
মা আর বোনের দুঃখটা কিছুটা হলেও ঘুচবে।
রাফান এর বাবা মারা গেছে সেই ছোট বেলায়।
রাফান কিন্তু একজন প্যাক্টেসিং মুসলিম।
যদিও পেন্ট শার্ট পড়ে।
কিন্তু মুখে লম্বা দাড়ি।
মাথায় টুপি আর চেহেরায় হাসোজ্জল একটা ভাব লেগেই থাকে।

যোহর এর ফরজ সালাত এর নামাজ শেষ করার পরেই কেউ একজন ঘোষণা দিলো।  আপনারা সুন্নাত শেষ করে কেউ উঠবেন না, যার যার জায়গা বসে থাকবেন ।
আপনাদের সবার জন্য বিরিয়ানির দাওয়াত আছে ।
আমাদের মসজিদ এর সভাপতির মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে খাওয়ানো হবে ।
যারা খাবেন তারা বারান্দায় গিয়ে খাবেন।
ওখানে পানির ব্যবস্হা আছে।
আর যারা নিয়ে যাবেন সেটা ভিন্ন কথা।
একদমে কথাগুলো বলে ফেলো লোকটা।
এতোগুলা কথার মাঝে অনেকেই দুই রাকাত সুন্নাত শেষ করে বসে আছে দাওয়াত রক্ষা করার অপেক্ষায়।

রাফান সুন্নাত শেষ করে মসজিদ এর দরজায় আসতেই আস্ত বড় একটা বিরিয়ানির প্যাকেট হাতে গুজে দিলো একজন ।
কে দিলো এতো ভিড়ের মাঝে সেই মুখটা আর দেখা হলো না।
সবাই উঠে গেছে অথচ কথা ছিলো যার যার জায়গা বসে থাকার কথা।

না এখন আর হোটেলে গিয়ে অযথা বিশ টাকা নষ্ট করে লাভ নেই ।
রিক্সা দিয়ে মেস এ গিয়ে দুই ভাই মিলে বিরিয়ানি খাওয়া যাবে।
রাফান বিরিয়ানির প্যাকেটটা হাতে নিয়ে রাস্তায় এসে ভাবছে অন্য কথা।
কুরআন এর এই আয়াত এখন তার জীবনে বাস্তব মনে হচ্ছে ।
আল্লাহ এমন হঠাৎ রিযিক এর কথাই কুরআনে কত সুন্দর করে বলে দিয়েছেন ।
যে আল্লাহকে ভয় করে, আল্লাহ তার জন্য কোনো না কোনো পথ বের করে দেবেন। আর তাকে (এমন উৎস থেকে) রিজিক দেবেন যা সে ধারণাও করতে পারবে না।’
 (সুরা ত্বালাক : আয়াত ২-৩)

রাফান এই আয়াতটা মনে হতেই নিজের অজান্তেই কেঁদেই দিলো।
চোখ দিয়ে একটু জলও গড়িয়ে পড়ছিলো।
কিন্তু পরক্ষণেই রিক্সাওয়ালা বললো মামা যাইবেন ?
রাফান চোখের পানি মুছে আকাশের দিকে চেয়ে বললো হ যামু।

লেখকঃ আমিরুল ইসলাম

About the author
Fawzul Kabir

Leave a Comment