জ্ঞান বা ইলম বিষয়ে একটি শিক্ষনীয় গল্প

Spread the love

বিশাল এক রাজা ছিলেন। তার রাজ্যে অনেক উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা ও নিম্নপদস্ত কর্মচারী থাকতো। প্রতিনিয়ত রাজা তার নিয়ম অনুযায়ী রাজ্য চালিয়ে যান।

নিম্নপদস্ত কর্মচারী ও উচ্চপদস্ত কর্মকর্তার মধ্যে মনোমালিন্য হয় এটাই স্বাভাবিক। এ মনোমালিন্যটা স্বাভাবিকভাবে বেতন বা সুযোগ সুবিধা বা কাজ কম বা বেশি ইত্যাদি বিষয়ে হয়ে থাকতে দেখা যায়। একদিন নিম্নপদস্ত কর্মচারী লক্ষ্য করে দেখে, উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা যা খায়, আমিও তো তাই খাই, সে যে রাজ্যে বসবাস করে আমিওতো সেই রাজ্যে বসবাস করি। এ অবস্থায় নিম্নপদস্থ কর্মচারী ভাবতে লাগলো, রাজা মশাই তার যে উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা আছে তাকে বেতনাদি থেকে অন্যান্য সুযোগ সুবিধা বেশি দিয়ে থাকেন।

নিম্নপদস্ত কর্মচারী যিনি তার কাছে সবসময় এ বিষয় নিয়ে মনের মধ্যে খটকা লাগে। সে কূলকিনারা খোঁজে পায় না। আর সে নিজেকে বলতে লাগে, আমি যা খাই, যে রাজ্যে বসবাস করি,যে রাজার নিয়ম মেনে চলি সে অর্থাৎ উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা সেও তাই খায়, সে ঐ একই রাজ্যে বসবাস করে এবং ঐ একই রাজার নিয়ম মেনে চলে। কিন্তু নিম্নপদস্ত কর্মচারীর কথা, রাজা মশাই কেন তাকে অর্থাৎ উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাকে, এতো এতো বেতন ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে রাখছে কেন?

নিম্নপদস্ত কর্মচারীর দুঃখের কোন শেষ নেই, একদিন নিম্নপদস্ত কর্মচারী রাজা মশাইকে বলেই ফেললো, আপনি কেন উচ্চপদস্ত কর্মকর্তাকে এতো এতো বেতন ও সুযোগ সুবিধা দিয়ে রাখছেন? আমার এতো কম বেতন ও সুযোগ সুবিধাও কম কেন এর জবাব চাই চাই। এতোক্ষণে রাজা তার অর্থাৎ নিম্নপদস্ত কর্মচারীর বিষয় টা বুঝতে পেরেছেন, সে কি বুঝাইতে চাচ্ছে।

তো রাজা মশাই মনে মনে বললেন (নিম্নপদস্ত কর্মচারীকে) তাহলে একটা পরীক্ষা করা যাক। নিম্নপদস্ত কর্মচারীকে সে পরীক্ষার কথা বুঝতে দেয়নি রাজা মশাই। রাজা মশাই বললেন, দেখো আমার রাজ্যের অমুক জায়গায় এক স্ত্রী কুকুর (Bitch) বাচ্চা দিয়েছে তার খোঁজ নিয়ে আসো। রাজার কথামত নিম্নপদস্থ কর্মচারী সেই স্ত্রী কুকুরের (Bitch) বাচ্চা দেখতে গেল। স্ত্রী কুকুরের বাচ্চা দেখে আসার পর রাজা মশাই নিম্নপদস্ত কর্মচারীকে প্রশ্ন করতে শুরু করে দিল, বলো দেখি, বাচ্চা কয়টা দিয়েছে, কোন বাচ্চার রং কি কি রকম? ইত্যাদি।

নিম্নপদস্ত কর্মচারী এসব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য কয়েকবার সেখানে গিয়ে দেখেলো এবং তার উত্তর দিলেন। রাজা মশাই বললেন, আচ্ছা! বেশ। এবার আমার উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা তুমি যাও, দেখে আসো কি খবর। রাজার কথামত উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা দেখতে চলে গেলেন স্ত্রী কুকুর বাচ্চাগুলোকে। তিনি সেখানে গিয়ে কুকুরের বাচ্চা কয়টা, কি রং এর, কোন বাচ্চার পা ভাঙা, কোন বাচ্চার শ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে ইত্যাদি । ইনি সব একবার এসেই সব বৃত্তান্ত নিয়ে গেলেন রাজা মশাই এর কাছে।

রাজা মশাই নিম্নপদস্ত কর্মচারীকে বললেন তুমি সেখানে বেশ কয়েকবার গিয়েছিলে, কিন্তু আমার উচ্চপদস্ত কর্মকর্তা সে একবার গিয়ে সব তথ্য নিয়ে এসেছে, এখন বলোতো সে বেশি বেতন ও সুযোগ সুবিধা বেশি পাবে নাকি তুমি? নিম্নপদস্ত কর্মচারী বললো, রাজা মশাই আমার মস্ত বড় ভুল হয়েছে, আমার যা বেতন দিচ্ছেন, তাতেই চলবে, বেশি লাগবে না।

এখান থেকে শিক্ষণীয়, জ্ঞানীদের দ্বারা যে কাজ হয় তা মূর্খদের দিয়ে হয় না। সুতরাং, আমরা বলতে পারি জ্ঞানীরাই বেতন ও সুযোগ সুবিধা বেশি পাওয়ার যোগ্য। এজন্য আমাদের জ্ঞানী মানুষ হওয়ার জন্য বেশি করে পড়তে হবে।

About the author
Fawzul Kabir

Leave a Comment