রাজা তাঁর মুকুটের জন্য শক্তিশালী বা ক্ষমতাবান। এজন্য তাঁর দেশের লোকেরা তাঁকে সম্মান এবং মান্য করে থাকে। এমনকি যদি কোন লোক কোন অপরাধ নাও করে থাকে, রাজা তাকে শাস্তি দিতে পারেন এটা রাজার এখতিয়ার।
অধিকন্তু বিনা কারণে রাজা যে কোন লোককে পুরস্কারে পুরস্কৃত করতে পারেন এটাও রাজার এখতিয়ারের মধ্যে।
এর অর্থ মুকুট পরিধানকৃত রাজার ইচ্ছাই হলো দেশের আইন। আবার এই রাজাকে যদি মুকুটহীন করা হয়, তবে তিনি সাধারণ মানুষের পর্যায়ে নেমে যান। অর্থাৎ, তখন তিনি যে কাউকে ইচ্ছা অনুযায়ী শাস্তি বা পুরস্কৃত করতে পারেন না। আর এ বিষয়টা সাধারণ পর্যায়ের লোকেরাও গ্রহণ করবে না। বর্তমানে তিনি গাছের পাতা বা খড়কুটোর মতো। যেদিকে বাতাস বেশি সেদিকে তিনি যান।
অন্যথায় একজন চরিত্রবান ব্যক্তি সর্বদা একজন রাজা অপেক্ষা অধিক ক্ষমতাবান। তাঁর চরিত্রই তাঁর জীবনের মুকুট এবং কেউ এটা তাঁর কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। যদি না সে কোন অন্যায় অথবা পাপ কাজের দ্বারা নষ্ট না করে থাকে।
একজন চরিত্রবান লোক গরীব হতে পারেন,কিন্তু মৃত্যু পর্যন্ত সকল প্রকার সম্মান পেয়ে থাকেন। সৎ গুণাবলীই হচ্ছে সৎচরিত্র। যেমনঃ সততা, নিষ্ঠাবান, সত্যবাদিতা, নির্ভীকতা, তাকওয়াবান, পরহেজগারী ও আল্লাহওয়ালা ইত্যাদি।
মানবজীবনের একমাত্র মুকুটই হচ্ছে তাঁর সৎচরিত্র। অপরপক্ষে, অসৎ চরিত্রের অধিকারী লোক কোথাও সম্মান পান না। একজন চরিত্রহীন মানুষ অধিকতর খারাপ এবং পশু অপেক্ষা বিপদজ্জনক । শুধু তাই নয়, তার মৃত্যুর পরও কেউ তাকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে না।
অথচ আমাদের নবী ‘রহমাতুল্লিল আলামীন’ ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। আমরা তায়েফের ঘটনা সবাই কিছু না কিছু জানি যে, তিনি দ্বীনের দাওয়াত নিয়ে যখন তায়েফে গেলেন তখন সেখানকার কাফের মুশরিকরা তাঁকে পাথর নিক্ষেপ থেকে শুরু করে গালিগালাজ, অত্যাচার, নিপীড়ন চালিয়েছিল এবং শুধু তাই নয় তাঁর পবিত্র শরীর মুবারক থেকে রক্ত বের করে দিয়েছিল, জুতা মুবারক রক্তে রঞ্জিত হয়ে গিয়েছিল।
এই সফরে হুজুরের সাথে হয়রত যায়েদ বিন হারেসা (রা.)ও ছিলেন। তিনিও আহত হয়ে ছিলেন। কিন্তু সাহাবীর নিজের কোন চিন্তা ছিল না, বরং প্রিয় মাহবূব রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিন্তা ছিল। তিনি আমাদের প্রিয় নবীর পবিত্র শরীর মুবারক থেকে রক্তের দাগ পরিস্কার করতে লাগলেন এবং আবেদন করলেন যে, ইয়া রাসুলুল্লাহ ! এই হতভাগাদের জন্য বদ দুআ করে দিন।
পাহাড়ের ফেরেশতা উপস্থিত হল এবং আরজ করল ইয়া রাসুলুল্লাহ ! যদি আদেশ হয় তাহলে পাহাড়ের চূড়াসমূহকে মিলিয়ে এই সব বেআদবদেরকে চূর্ণ -বিচূর্ণ করে দেওয়া হবে। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমি বদ দুআ করার জন্য প্রেরিত হইনি। আমি দুআর জন্য এসেছি, নষ্ট ও ধ্বংস করার জন্য আসিনি।
আশ্চর্যের কি আছে যে, তাদের সন্তানদের মধ্যে এমন নেক বান্দা হবে যারা আল্লাহর পয়গামের উপর আমল করবে, হুজুর সাঃ নিজ প্রতিপালকের দিকে মনোযোগী হলেন এবং এই দুআ করলেন, হে আল্লাহ এদেরকে আপনি হেদায়েত দিন, তাদের বেআদবীসমূহকে ক্ষমা করে দিন, এ সকল লোক আমাকে চিনে না।
হুজুর সাঃ কতই না সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী ছিলেন। আঘাত সহ্য করার পরেও তাঁর উম্মতের জন্য বদ দুআ করেন নি বরং উম্মতের জন্য সর্বোত্তম দুআ করেছেন। এটাই সর্বোত্তম চরিত্রের গুন।
আমাদের মহান চরিত্রের অধিকারী নবীজীর সঙ্গে থেকে সাহাবীরাও দুনিয়ায় জান্নাতের সার্টিফিকেট পেয়ে গেছেন। সাহাবীদের ঘরে কোন মেহমান আসলে, তাঁরা নিজে না খেয়ে মেহমানকে আপ্যায়ন করতেন। সাহাবীরা ঘরে মেহমান আসালে খুশি হতেন।
অথচ আমাদের বর্তমানে চরিত্রের কি বেহাল দশা, মেহমান আসলে হাসি-মুখে কথা বলাতো দূরের কথা, সালাম পর্যন্ত সৌজন্যতাবোধ রাখি না।
আমাদের নবীজী শিখিয়েছেন, পরিচিত -অপরিচিত সব ভাইদেরকে সালাম দিতে, হাসি মুখে কথা বলতে, জীবন চলতে যা যা প্রয়োজন তা সব শিখিয়েছেন।
আমরা হাদীসে পাই,
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণীত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমিতো প্রেরিত হয়েছি উত্তম আখলাকের পূর্ণতা দানের জন্য। (মুসনাদে আহমদ)
আল্লাহতা’লা পবিত্র কুরআনে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন,
“আপনি অবশ্যই মহান চরিত্রের অধিকারী” (আল কলাম, আয়াতঃ০৪)
একজন সৎচরিত্রবান হওয়ার জন্য আমাদের বিশ্ব নবী হযরত মুহাম্মদ (স.) সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকরণ অপরিহার্য।
একজন সৎচরিত্রবান ব্যক্তিই পারে মহৎ এবং শক্তিশালী জাতি গঠন করতে। একজন সৎচরিত্রবান হওয়ার সর্বোত্তম সময় ছাত্রজীবন। খারাপ বই,খারাপ বন্ধু এবং খারাপ সংস্কৃতি মানুষকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়।
কথিত আছে,
টাকা হারালে কিছু হারায় না, স্বাস্থ্য হারালে কিছু হারায় কিন্তু তার চরিত্র হারালে সব কিছু হারিয়ে যায়।