সকালের বিতর্ক ইস্যুতে অগোছালো কথাগুলোর গোছানো রূপ। সময় থাকলে পড়তে পারেন। আর যদি সম্ভব হয় তবে, যেখানে পৌঁছালে কাজ হবে সেখানে পৌঁছে দিন। জাযাকাল্লাহ খাইরান।
___________________________________
সম্মানের সাথে বলছি, কোনোরূপ ব্যক্তি আক্রমণ কিংবা কোন সমালোচনা করা মোটেই আমার উদ্দেশ্য নয়। ফেস দ্যা পিপলের শ্রদ্ধেয় জনাব সাইফুর সাগর ভাই সকালের দিকে একটি হিন্দু-মুসলমান বিতর্কের জন্য আলেম কিংবা বক্তা অতিথি হিসেবে সাজেস্ট করার জন্য একটি পোস্ট করেছেন।
.
আমি অধম যদি সেই বিতর্কের বিষয়টি ভুল না বুঝে থাকি, তবে সেটা ছিলো সনাতন ধর্মের একটি স্পর্শকাতর বিষয়। যেখানে সনাতন ধর্মের একজন ডিবেট করতে চান, হিন্দু বা সনাতন ধর্মে বর্ণাশ্রম বা জাতে জাতে উঁচুনিচু ভেদাভেদ নেই। তিনি এই দাবী করেছেন। কোনো মুসলিম স্কলার বা বক্তাকে এই বিষয়ের বিপরীতে অর্থাৎ বর্ণাশ্রম প্রথা আছে এই অবস্থানে বিতর্ক করতে আহবান জানানো হয়েছে এবং দর্শকদের কাছেও সাজেশন চাওয়া হয়েছে।
.
এই আহবান জানানোর সাথে সাথে আমাদের অগণিত মুসলমান ভাই শুধু শুধু কিংবা আবেগের বশবর্তী হয়েই ইসলামিক বক্তা ও স্কলারদের নাম সাজেস্ট করেছেন। সত্যি বলতে, তারা আসলে বিষয়টির গভীরতা উপলব্ধি করতে পারেনি। যা খুবই হতাশাজনক।
.
আমার কথা হচ্ছে, যদি সনাতন ধর্মে বর্ণাশ্রম শ্রেণিবিভক্তি না থাকার দাবী তাদেরই কেউ একজন করে থাকে তবে সেই ডিবেটে কোনো মুসলমান বিতার্কিকের যাওয়ার হেতু কী? সনাতম ধর্মাবলম্বীদের মাঝে বর্ণাশ্রম শ্রেণিবিভক্তি যে আছে সেটা মুসলমানদের কেন প্রমাণ করতে হবে? ধর্মের কিতাবাদীতে না থাকলেও এটা যে ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত একটি বিষয় এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। বাস্তবতা হচ্ছে, ভারতবর্ষের অতীত ইতিহাস ও বর্তমান পর্যবেক্ষণ বলে, সনাতন ধর্মে বর্ণাশ্রম ও শ্রেণিবিভক্তির ব্যপ্তি প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হয়।
.
তিনি (সনাতন ধর্মের উনি) আগে থেকেই বলছেন, সনাতন ধর্মে বর্ণাশ্রম শ্রেণিবিভক্তি নেই। তাহলে প্রশ্ন আসে বর্তমান ও সুদূর অতীতে তাদের মধ্যে এমন শ্রেণিবৈষম্য কেন দেখা যায়? এটা নিয়ে তাদের (সনাতন ধর্মাবলম্বীদের) মধ্যকার পারস্পরিক আলোচনা বা বিতর্ক হতেই পারে। এই বিষয়ে বিতর্ক করতে মুসলিম বিতার্কিকের অংশগ্রহণ সম্পূর্ণরূপে আত্মঘাতী বলে মনে করি।
.
বিতর্ক করতে গিয়ে যদি দেখা যায়, এই ধরণের বর্ণাশ্রম শ্রেণিবিভক্তি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় বই পুস্তক এবং দলীল দস্তাবেজ দ্বারা প্রমাণিত নয়। সর্বোপরি, চলমান এই বিষয়টি ধর্মীয় বিধিনিষেধের অংশই নয় বরঞ্চ এই বর্ণাশ্রম ব্যবস্থার দ্বারা মূলত সমাজের গরীব এবং নিচু শ্রেণিকে দলিত, শোষণ ও শাসন করার জন্য তাদের-ই নিজেদের বানানো মৌখিক নিয়ম তখন তা মুসলিমদের জন্য সম্পূর্ণ হিতে বিপরীত হবে।
.
বলাবাহুল্য, আমি তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের বিশেষজ্ঞ নই। কিন্তু এতটুকু বলতে পারি, অন্যধর্মের এমন অযাচিত বিষয় প্রমাণ করার দায় মুসলিমদের উপর আবর্তিত হয় না। যদি এই বিতর্কিত বিষয়টি মুসলমানদের কেউ প্রমাণ করেও ফেলে সেটা সমাজে বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির কারণ হবে। হিন্দু-মুসলমান রেষারেষিকে উস্কে দেবে।
.
এর বাইরে মুসলমানদের এই বিতর্কে যোগদান করা এবং জেতা কিংবা হারার মধ্যে সকল দিক থেকেই সুদূরপ্রসারী একটি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনেকরি। যেমন: এই বিতর্কের ফলে অনেকেই এই জাতীয় মিথ প্রচারের জন্য মুসলিমদের দায়ী করা শুরু করবে। যা মোটেই সঠিক কিংবা সমীচীন নয়।
.
আমি আরও মনেকরি, এই সমস্যাটি সনাতন ধর্মের। এই সমস্যা যেহেতু সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিজেদের সেহেতু এই বিষয়টি সমাধান করার দায় তাদের নিজেদের উপরই বর্তায়। সেহেতু এই বর্ণাশ্রম শ্রেণিবিভক্তির বিষয়টি তাদের নিজেদের পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান ও দায়মুক্ত হওয়ার বিষয়। এখানে মুসলিম স্কলার বা বক্তার বিতর্ক করার কোনো জরুরত নেই।
.
এই প্রেক্ষিতে বলব, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মুসলমানদের একটি সুবিশাল দাওয়াতি ক্ষেত্র। এই জাতীয় বিতর্কের ফলে হিন্দু ধর্মের অপ্রমাণিত একটি বিষয় জোর করে প্রমাণ করার চেষ্টার জন্য মুসলিমদের নিজেদের উপর দায়ভার চলে আসবে। এমনকি মিথ্যা অভিযোগকারী হিসেবেও প্রতিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। এমনটা বিতর্ক জিতে গেলেও হবে, আর হেরে গেলে তো আরও প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হবে।
.
আমি মনেকরি, এই সমস্যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের একান্তই নিজেদের। এমনকি এই বিষয়টি খুব-ই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। এই বিতর্কে কোনো মুসলিমের যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কিংবা যৌক্তিকতা কোনোটাই আমি দেখি না। সর্বোপরি, এই বিষয়টি মুসলিমদের জন্য এমন এক শাখের করাত, যেটা সমভাবে এদিকেও কাটবে, আবার ঐদিকেও কাটবে।
____________________________________
লিখেছেনঃ সাবেক কিংকর্তব্যবিমূঢ়