আমলনামা ভারী করার উত্তম সুযোগ

Spread the love

এই দশকে আমাদের আমলনামা ভারি করার উত্তম সুযোগটি লুফে নিই।

জিলহজ্ব মাসের চাঁদ উঠার পর থেকে কোরবানি করার পূর্ব পর্যন্ত, চুল, গোঁফ, নখ ও শরীরের বিভিন্ন স্থানের লোম বা পশম না কাটা মুস্তাহাব।

এ সম্পর্কে উম্মে সালমা রাদিআল্লাহু তাআ’লা  আনহা থেকে বর্ণিত হয়েছে৷ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি জিলহজ্বের চাঁদ দেখে এবং কোরবানির ইচ্ছা করে, সে যতক্ষণ কোরবানি না করে, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন চুল বা নখ না কাটে।’ [১] তবে এ আমল মুস্তাহাব, ওয়াজিব নয়।

যিলহজ মাসের প্রথম দশ দিনের সাওম পালন একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। যেহেতু অন্যান্য নেক আমলরে মধ্যে সিয়ামও অন্যতম, তাই এ দিনগুলোতে খুব যত্নসহকারে সিয়াম পালন করা করতে পারি।

عن حفصة- رضى الله عنها- قالت: أربع لم يكن يدعهن النبي- صلى الله عليه وسلم-: صيام عاشوراء، والعشر، وثلاثة أيام من كل شهر والركعتين قبل الغداة . رواه أحمد، والنسائي صحيح سنن أبي داود، صحيح سنن النسائي

হাফসা রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহা থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো চারটি আমল পরিত্যাগ করেননি। সেগুলো হল: আশুরার সাওম, যিল হজের দশ দিনের সাওম, প্রত্যেক মাসে তিন দিনের সাওম, ও জোহরের পূর্বের দুই রাকাত সালাত।[২]

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
‘আল্লাহর নিকট জিলহজ্জের দশ দিনের নেক আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় অন্য কোনো আমল নেই।’ সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন- ‘ ইয়া রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ,আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও এরচেয়ে উত্তম নয়?’ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- ‘ না,আল্লাহর রাস্তায় জিহাদও নয়। তবে সেই ব্যক্তির জিহাদ এরচেয়ে উত্তম, যে নিজের জানমাল নিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হয়েছে, তারপর কোনো কিছুই নিয়ে ফিরে আসেনি।'[৩]  

আরেক হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন- ‘আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার নিকট জিলহজ্জের দশ দিবসের আমলের চেয়ে অধিক প্রিয় ও মহৎ অন্য কোনো দিনের আমল নেই, সুতরাং তোমরা সেই দিবসগুলোতে অধিক পরিমাণ তাসবিহ,তাহমিদ,তাহলিল,তাকবির জিকির করো।'[৪]

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন:—

﴿ لِّيَشۡهَدُواْ مَنَٰفِعَ لَهُمۡ وَيَذۡكُرُواْ ٱسۡمَ ٱللَّهِ فِيٓ أَيَّامٖ مَّعۡلُومَٰتٍ عَلَىٰ مَا رَزَقَهُم مِّنۢ بَهِيمَةِ ٱلۡأَنۡعَٰمِۖ ٢٨ ﴾ [الحج : ٢٨]

‘যাতে তারা তাদের কল্যাণময় স্থানগুলোতে উপস্থিত হতে পারে এবং তিনি তাদেরকে চতুষ্পদ জন্তু হতে যা রিজিক হিসেবে দান করেছেন তার উপর নির্দিষ্ট দিনসমূহে আল্লাহর নাম স্মরণ করতে পারে।

অধিকাংশ আলেম বলেছেন: এ আয়াতে নির্দিষ্ট দিন বলতে যিলহজের প্রথম দশ দিনকে নির্দেশ করা হয়েছে। এ সময়ে আল্লাহর বান্দাগণ বেশি বেশি করে আল্লাহর প্রশংসা করেন, তার পবিত্রতা বর্ণনা করেন, তার নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করেন, কুরবানির পশু যবেহ করার সময় আল্লাহর নাম ও তাকবীর উচ্চারণ করে থাকেন।

হাদিসে আছে চারটি বাক্য আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। ১-সুবহানাল্লাহ, ২-আলহামদু লিল্লাহ, ৩-লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ৪-আল্লাহু আকবর। এ দিনগুলোতে এ যিকিরগুলো করা যেতে পারে

হজ পালনকারী ছাড়া অন্যদের জন্য আরাফার দিন সাওম রাখা। আবু কাতাদাহ রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আরাফার দিনের সাওম রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,

«احتسب على الله أن يكفر السنة التي قبله والسنة التي بعده » .]…رواه مسلم [

আমি আল্লাহর কাছে আশাবাদী, ইহা পূর্ববর্তী এক বছর ও পরবর্তী এক বছররে গুনাহর কাফফারা হবে।[৫]  

হাদিসে এসেছে—

عن عبد الله بن قرط عن النبي- صلى الله عليه وسلم- قال: «إن أعظم الأيام عند الله تبارك وتعالى: يوم النحر ثم يوم القر.» رواه أبو داود وصححه الألباني

আব্দুল্লাহ ইবনে কুরত রাদিআল্লাহু তাআ’লা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: আল্লাহর নিকট দিবসসমূহের মাঝে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হল কুরবানির দিন, তারপর পরবর্তী তিনদিন।[৬]

অন্তত এ দশটা দিন সকল গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করি। আমার রবের দেওয়া সুযোগটি কাজে লাগাই। পরকালের জন্য কিছু করি। রাব্বি আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

তথ্যসূত্র
_____________=_

১. সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৩৬৫৬
২. আহমদ: ৬/২৮৭, আবু দাউদ: ২১০৬, নাসায়ী: ২২৩৬
৩. বুখারি-৯৬৯
৪. আহমাদ-৫৪৪৬
৫. মুসলিম: ১১৬৩
৬.আবু দাউদ – ১৭৬৫

|| আমলনামা ভারী করার উত্তম সুযোগ ||
যাইনাব বিনতে মুহাম্মাদ আলী
১১ জুলাই ২০২১

About the author
Fawzul Kabir

Leave a Comment