ফুটবল খেলা থেকে গভীর অনুধাবন

Spread the love

আমরা প্রায় ফুটবল খেলা দেখি। টিভিতে অথবা সরাসরি যাই হোক। খেলা দেখি ঠিকই কিন্তু এর থেকে ফিকির করি না। আমাদের এলাকায় একটা টুর্নামেন্ট চলছে। আসরের নামাজ পড়ে বের হলাম ফুটবল খেলা দেখার জন্য। কি কান্ড! মাঠের ভিতর প্রবেশ নাই করতে দেখি মাঠের চারিদিকে মহিলা দর্শক। ব্যাপারটা সাংঘাতিক। ভাবলাম খেলা দেখবো না। কিন্তু এসেই যখন পড়েছি তখন একটু দেখে যাই। মাথা নিচু করে মাঠের এক কোনে দাঁড়িয়ে খেলা দেখতেছি। বাহ্!

খেলার পরিবেশটা বেশ সুন্দর লাগছে। হঠাৎ করে ভাবলাম – দেখি খেলার মাঠ থেকে কিছু অনুধাবন করতে পারি কিনা। ভাবতে শুরু করলাম। হঠাৎ স্মৃতিপটে কিছু চিন্তার খোরাক দেখা দিলো। যারা বলে আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে; তিনি ভালো মন্দ পথে পরিচালনা করে কেনো জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন! তাদের উত্তরের সহজ একটা থিউরি খুঁজে নিলাম খেলার মাঠ থেকে।

এই যে খেলার মাঠ। চারিদিকে দর্শক। মাঠের চার কোণে মহিলা দর্শক। মাঠের ভিতর দুই দলের খেলোয়াররা দৌড়াচ্ছে গোল দেয়ার জন্য। আসুন এখন অনুধাবন করি –

১/ দুই দলের খেলোয়াররা দৌড়াচ্ছে কে আগে গোল দিয়ে বিজয় লাভ করবে। এখানে দুই দলের যে কোনো একদলকে পরাজয় বরণ করতে হবে নিশ্চিত। দুই দল জিতা সম্ভব না। যার নসিবে বিজয় লেখা আছে সে বিপরিত দলকে পরাজয় বরণ করিয়ে জিতবে। দুইটা দলের যেকোনো একটা দল জিতবে এটা আগে থেকেই সুনির্ধারিত। তাই না?
এবার আসুন হাদিসের দিকে। রাসূল সা. বলেছেন – মানুষের মধ্যে দুইটি দলের একটিকে জান্নতি হিসেবে এবং আরেকটি দলকে জাহান্নামের জন্যই সৃষ্টি করা হয়েছে।

ফুটবলের মাঠটা হলো পৃথিবী। আর এই মাঠ নামক পৃথিবীর মানুষগুলো হলো খেলোয়ার। খেলোয়াররা জয়ের জন্য মাঠের ভিতর দৌড়াচ্ছে। দুই দলেই সমান তালে দৌড়াচ্ছে। সমান তালে দৌড়ার পরেও কি দুই দলে জিতবে?? না । যে কোনো একদল জিতবে। যেই দলটা ভালো পারফরমেন্স করবে সেই জিতবে। ঠিক তেমনি পৃথিবীতে দুই দলের লোক সমান তালে দৌড়াচ্ছে। কেউ জান্নাতির দল আবার কেউ জাহান্নামির। যারা জান্নাতি তাদের দৃঢ় বিশ্বাস আছে জান্নাতে যাওয়ার। যার দরুন তারা আল্লাহর ইবাদাতে মশগুল। আবার যারা জাহান্নামি তারা আমলের ধার কাছেও নেই‌।

মাঠের ভিতর যে দল ভালো খেলবে তাদেরই তো বিজয় হওয়ার কথা তাই না?  দুনিয়ায়ও মানুষ দুই দলে বিভক্ত। যারা জান্নতি তারা জান্নাতে যাওয়ার আশা পোষণ করে।

সুতরাং আল্লাহ যাদের জান্নাতে যাওয়ার জন্য সৃষ্টি করেছেন অবশ্যই তারা জান্নাতের মেহমান।

২/ খেলার মাঠে দেখবেন, কোনো দল যদি গোল খায় তাহলে তাদের মানসিকতা বদলে যায়। ভেঙ্গে পড়ে। আবার দেখবেন কেউ গোল খাওয়ার পরেও সেটা শোধ দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লাগে। এটার থেকে উদাহরণ দেয়া যায় মুমিন ব্যক্তিদের সাথে। যারা মুমিন তারা পাপের কাজ করার পরেও দূর্বল হন না বরং সেই পাপের জন্য ক্ষমা চেয়ে দ্বিগুণ আমলে লেগে পড়েন। আর কিছু লোক আছে যারা পাপ কাজ করে ভেঙ্গে পড়েন। সামনের দিকে আর অগ্রসর হওয়ার প্রয়াস পান না।

এই হীন মানসিকতাই তাদের দূর্বল করে প্রভুর রহমের ঝর্ণা থেকে দূরে রাখে। অথচ ফুটবলে যে দলটি গোল খাওয়ার পরেও তাদের মানসিকতা ঠিক করে সেই গোলটি শোধ করার জন্য নতুন ভাবে জাগ্রত হয়, খেলা শেষে দেখা যায় তারাই বিজয়ী। পক্ষান্তরে যারা মানুষ হত্যার মতো মহা পাপের কাজ করার পরেও অনুতপ্ত হয়ে রবের দরবারে ক্ষমা চেয়ে ফিরে আসে আপন নীড়ে, বেলা শেষে দেখা যায় তারাই সফল।

৩/ মানুষকে ধোকা দেয় শয়তান। আর এই শয়তানের দিকে মনোনিবেশ করে মানুষ পা দেয় ফিতনার অন্ধ মহলে। আমি যখন মাঠে প্রবেশ করবো তখন দেখি মাঠের চার কোণে মহিলা দর্শক খেলা দেখতেছে। এই মহিলা দর্শক‌ হলো ফিতনা। ধরুন, মাঠের ভিতরের খেলোয়াররা দুনিয়ার মানুষ। আর মাঠটা হলো পৃথিবী। তাহলে পৃথিবীর আনাচে কানাচে রয়েছে ফিতনা। এখন যদি মাঠের ভিতরের একদলের খেলোয়াররা মহিলা দর্শকের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে তাহকে বিপরীত দল নিমিষেই গোল করে বিজয়ী হবেন। অন্য দলকে আফসোস করতে হবে।

এই আফসোসের কারণটা হলো ঐ‌ মহিলা দর্শক ফিতনা। ঠিক তেমনি দুনিয়ার মানুষের দুই দলের পাপী বান্দারা যদি প্রভুর যিকির বাদ দিয়ে দুনিয়ার ফিতনায় হাবুডুবু খায় নিশ্চিত তাদের জন্য রয়েছে দূর্ভগ। আর যদি মুত্তাকি বান্দাদের মতো ফিতনার দিকে না তাকিয়ে আল্লাহর ইবাদাত করেই যায় তাহলে তারা ফুটবলের ঐ দলটির মতো সফল হবে যেই দলটি মহিলা দর্শকদের দিকে না তাকিয়ে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছে গেছে।

৪/ দুনিয়া নামক ফুটবলের মাঠের ভিতর রয়েছে রেফারি। যিনি খেলার সব কিছুই পরিচালনা করতেছেন। খেলোয়ারদের সব কিছু রেকর্ড করতেছেন। তার কথার বাহিরে কিছুই হবে না। ঠিক তেমনি পৃথিবীর এই মরিচিকার রাজ্যে প্রত্যেকের সাথে দুজন করে ফেরেশতা/রেফারি নিযুক্ত আছেন। ভালো মন্দ সব লিপিবদ্ধ করতেছেন। এই লিপিবদ্ধকৃত আমলগুলো হাশরের মাঠে আল্লাহর দরবারে পেশ করা হবে। কেউ ছাড় পাবে না এক চুল পরিমাণ। বেশী মিথ্যা কথা বললে থার্ড রেফারির মতো ফেরেশতারা বান্দার ছোট্ট ছোট্ট কর্মগুলোও চোখের সামনে রিপ্লে করবেন। তখন কি ছাড় পাওয়া যাবে??

৫/ খেলার মাঠে রেফারির কথা অমান্য অথবা কোনো খেলোয়ার ফাউল করলে লাল কার্ড অথবা হলুদ কার্ড দেখিয়ে সাবধা  করে দেন। ঠিক তেমনি দুনিয়া নামক এই খেলার মাঠে কেউ যদি প্রভুর বিধান মানতে দ্বিধাবোধ অথবা তার আইনের বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষকে অত্যাচার করেন তখন আল্লাহ তায়ালা রেফারির মতো আগে সতর্কবার্তা স্বরুপ হলুদ কার্ড দেখিয়ে সামান্য কিছু শাস্তি দেন। যদি দ্বিতীয়বার তেমনটা আবার করেন তাহলে লাল কার্ড দেখিয়ে গোটা জাতিকে ফাউলকৃত খেলোয়ারের মতো পৃথিবীর রঙ্গমঞ্চ থেকে ধ্বংস করে দেন।

ফুটবল খেলা দেখতেছি আর এসব ভাবতেছি। খেলার সাথে মিলিয়ে নিচ্ছি বাস্তবতাকে। আল্লাহ তায়ালা গবেষণা করতে বলেছেন তার সৃষ্টিজগৎকে নিয়ে। এজন্য সবসময় কিছু না কিছু ভাবনার মাঝে ডুবে থাকি। কোথাও গেলো, কিছু দেখলে খুঁজতে থাকি রবের সৃষ্টি নিয়ে অনুধাবন। জানি না, কতটুকু মিল রাখতে পারি। তারপরেও গবেষণা অথবা ভাবনার মাঝে ডুবে থাকলে চিন্তার বিকাশ করে। জরাজীর্ণ চিন্তার ভান্ডারটা প্রসারিত হতে থাকে। এজন্য সৃষ্টি নিয়ে ভাবতে হয়। আমার খুব ভালো লাগে ভাবতে। আর এই ভাবনা থেকেই এতটুকু লিখতে সক্ষম হয়েছি।

। ফুটবল খেলা থেকে গভীর অনুধাবন ।
।তোফায়েল আহমেদ ।

About the author
Fawzul Kabir

Leave a Comment