প্রথা ভাঙ্গা বিয়ে অতঃপর (শিক্ষণীয় গল্প)

Spread the love

অনেক দিন পরে আহনাফ এবং ফাতেমাকে ক্লাসে দেখা গেল। স্যার রোলকল শেষ করে, তাদের দুজনকে দাঁড় করিয়েছেন। এতোদিন অনুপস্থিতির কারণ জিজ্ঞেস করতেই ফাতেমা জবাব দিল তার বিয়ে হয়ে গেছে। এবার আহনাফও একই উত্তর দিল তারও বিয়ে হয়ে গেছে। ফাতেমার সাথেই তার বিয়ে হয়েছে শুনে সবাই কিছুটা অবাক হয়ে  তাদের দিকে তাকিয়ে রইল।

কেউ কিছুই জানল না  অথচ তাঁদের  বিয়ে হয়ে গেছে। এটা কোন কথা!

ক্লাস শেষে সবাই তাদের দু’জনকে বলতে লাগল।এই তোদের বিয়ে  হয়েছে ‘ আমাদের কাউকে জানালি না কেন?’
এই তো হুট করেই হয়ে গেল,বলল আহনাফ। হুট করে মানে! আহনাফ এবার বলতে শুরু করল, আমি আর ফাতেমা একে অপরকে পছন্দ করতাম। ফাতেমার বাসা থেকে বিয়ের জন্য  ছেলে  দেখা হচ্ছিল। আমি  আমার বাড়িতে বিষয়টা খুলে বলি বাবা-মাকে।  পরবর্তীতে দুই পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পারিবারিকভাবেই বিয়েটা হয়েছে।কয়েকজন আত্মীয়-স্বজন এসেছিল।

 ফাতেমা তুই কেন আমাদের কে বলিসনি! বলল সাবিহা। আমরা তো তোকে অনেক সাহায্য করতে পারতাম। বিয়েতে গাঁয়ে হলুদ, ডিজে-কনসার্ট, ভ্রুপ্লাগ, মেকাপ, হেয়ার স্টাইল, মেচিং ড্রেস আরও কতো ঝামেলা!

ফাতেমা বলেতে লাগল, “বিয়েটা মসজিদে হয়েছিল। বাসা থেকে  ককয়েকজন নিকটাত্মীয়কে ডাকা হয়েছিল।  বন্ধু-বান্ধবীদের কাউকে ডাকিনি।কারণ বিয়েটা মসজিদে হয়েছিল।”

এবার সবার চোখ  কপালে উঠে গেল!  বিয়ে মসজিদে হয় নাকি? মসজিদে তো মানুষ নামাজ পড়ে!  হ্যাঁ, মসজিদেই হয়েছে। আমাদের বাড়ির কাছে বাইতুন নূর মসজিদে। আমার মতামত নিয়ে  বাবা মসজিদে গিয়েছিলেন। যোহরের নামাজ শেষে  আহনাফের সাথে  আমার বিয়ে পড়ানো হয়েছিল।

তাহলে, তোদের বিয়েতে খাওয়ানো হয়নি?
হ্যাঁ, হয়েছে।মসজিদের সকল মুসল্লিকে খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছিল। বিরিয়ানির প্যাকেট। একটা  ছাগল আর দশকেজি গরুর মাংসতে ভোজ শেষ হয়েছে। বাড়তি কোন খরচ করতে হয়নি। বলতে পারিস একেবারেই সাধারণভাবে বিয়েটা হয়েছে।

মোহরানা কত নির্ধারণ করা হয়েছে রে! সামিমা জিজ্ঞেস করল। মোহরানা হিসাবে একলক্ষ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল যা নগদই দিয়েছে,ফাতিমা উত্তর দিল।

ফাতেমা আরও বলতে থাকল যে, আহনাফ কোন যৌতুকই নেয় নি। টাকা-পয়সা, আসবাবপত্র কিছুই না। হঠাৎ জেমি বলে উঠল,’ তোর শশুর বাড়ির কেউ কিছু বলেনি!’

ফাতেমা এবার হাসতে হাসতে বলল, না। কেউ কিছুই বলেনি।আমার শশুর বাড়ির সবাই যৌতুকের বিরুদ্ধে। আমার শাশুড়ি ‘ বিয়ের প্রথা ভাঙতে পক্ষে।’  তিনি যখন বউ হয়ে এসেছিলেন, তখন তার শাশুড়ি তার প্রতি জুলুম-অত্যাচার করেছিল। তখনই তিনি সংকল্প করেছিলেন যে, ছেলের বউকে তিনি নিজের কন্যা হিসাবে বরণ করবেন। আমি  তার আর পরিবারের সবার ব্যবহারে মুগ্ধ সত্যি তাঁরা  অনেক ভালো রে। ঘরটা শাশুড়ি আমার মনের মতো করে সাজিয়ে দিয়েছে,  ঘরে প্রবেশ করলেই প্রশান্তি অনুভব হয় রে!

এবার সবাই ভাবতে থাকল, এতো সাধারণভাবে কারও বিয়ে হয়! এতো ভালো শশুর-শাশুড়ি কেউ পায়? এখনো পৃথিবীতে ভালো মানুষ আছে তা নাহলে দুনিয়া এতোদিনে ধ্বংস হয়ে যেত!

পাদটীকাঃ

আমাদের সমাজে বর্তমানে যেসব বিয়ে হয় তার অধিকাংশই ইসলাম বিদ্বেষী। বিয়ের আংটি পড়ানো, গাঁয়ে হলুদ, বিয়ের সময় কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করে লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয়, বর-কনে বরণ, ডিজে পার্টি কিংবা নৃত্যানুষ্ঠান সবই অমুসলিমদের কৃষ্টি কালচার।এগুলো মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ঢুকে পড়েছে। একজন মুসলিমের নৈতিক দায়িত্ব হচ্ছে, ইসলামের অনুশাসন মেনে বিয়ে করা। 

নারী’বাদীরা  নারীদের অধিকার আদায়ের নামে  কয়েকলক্ষ টাকা মোহরানা নির্ধারণের জন্য সচেতন করেই যাচ্ছে,  আপাত দৃষ্টিতে মনে হতে পারে খুবই ভালো । তাঁরা মেয়েদের জন্য অনেক কিছু করছে। কিন্তু সত্যি হচ্ছে যেসব বিয়েতে মোহরানা কয়েকলক্ষ নির্ধারণ করা হয়, সেসব বিয়েতে মাত্র দশ-পনেরো  হাজার টাকা নগদে দিয়ে বিয়ে হয়, মেয়েদেরকে ঠকানো হয়। আল্লাহর বিধান হচ্ছে, “.. তোমরা আনন্দচিত্তে স্ত্রীদের দেনমোহর আদায় করো…” [ সূরা নিসা,আয়াতঃ ৪ ]

 আবার, সমাজের একটা ট্যাবু হচ্ছে, ছেলে কি চাকরি করে?  তার ভিত্তিতে  পাত্র নির্বাচন করা হয়। চাকরি না থাকলে পাত্র চলবে না। অথচ, ইসলামে ছেলেদের তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি দেখতে বলা হয়েছে।  মেয়েদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য দিতে বলা হয়েছে দ্বীনদারিতাকে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ মেয়ের বাবার অর্থ-সম্পদ দেখে ছেলেকে বিয়ে দেয়।

 বর্তমানে কিছু মানুষ সঠিকটা বুঝতে পেরেছে। ফলে  দিনদিন  স্টুডেন্ট অবস্থায় ছেলেদের বিয়ের  ব্যবস্থা করা হচ্ছে।  কিছু কিছু পরিবার এ বিষয়ে খুবই সচেতন হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ! ।তারা মনেপ্রাণে  বিশ্বাস করে,  ‘ একদিন  এ সমাজের  সকল কুপ্রথা, কুসংস্কার, অপসংস্কৃতি, নারীর প্রতি অবিচার সবকিছুই বন্ধ হবে। সমাজে আবারও শান্তি ফিরে আসবে। সকল প্রকার প্রথা ভেঙে খুব সাধারণভাবে ইসলামিক নিয়মানুযায়ী সমাজের প্রতেকটা মেয়ের বিয়ে হবে।  মেয়েরা তাদের শাশুড়ীদেরকে মায়ের মতো সন্মান আর  শ্রদ্ধা করবে। আর শাশুড়িরাও তাদের বউমাদের মেয়ের মতো আদর -স্নেহ করবে, তাদেরকে ভালোবাসবে।

লেখকঃ সাজ্জাদুল বারী শাহীন

About the author
Fawzul Kabir

Leave a Comment