জিলহজ মাস—অর্জন ও বিসর্জনের মাস

Spread the love

জিলহজ মাস সমাগত প্রায়। এ মাস হলো আল্লাহর ইবাদত, সিয়াম, কিয়াম, কুরবানি ও হজের মাস। রাতের বিবেচনায় রমজানের শেষ দশক শ্রেষ্ঠ হলেও দিনের বিবেচনায় কিন্তু জিলহজের প্রথম দশকই শ্রেষ্ঠ। কেননা, এ মাসেই রয়েছে বছরের সর্বোত্তম দিনসমূহ ও শ্রেষ্ঠ দিবস। বিশুদ্ধ হাদিসের বিবরণ অনুসারে কুরবানির দিন হলো আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ও শ্রেষ্ঠ দিন। পাশাপাশি আরাফা দিবসেরও রয়েছে অনন্য ফজিলত। কেননা, এ দিবসেই আল্লাহ তাআলা সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বান্দাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন। এ দিবসের সিয়াম আগে-পরের দু’বছরের (সগিরা) গুনাহ মোচন করে দেয়।

কুরবানিতে ত্যাগের সবক আর হজে আল্লাহ-প্রেমের ঝলক আখিরাত-প্রত্যাশী একজন মুমিন বান্দার জন্য এ মাসের সেরা দুটি নিয়ামত। এ মাসের প্রথম দশকের ইবাদত আল্লাহর নিকট সবচেয়ে বেশি প্রিয়। আর তাই তো মুমিন বান্দাদের সিয়াম, কিয়াম, তিলাওয়াত, জিকির ও তাকবিরে মুখরিত থাকে এ মাসের প্রথম দশক। একজন মুমিন বান্দার জন্য রমজানের পর জিলহজ মাস হলো দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অফারের মাস। সুতরাং এ মাসে ইবাদত ও আমলের মাধ্যমে আমাদের আল্লাহর একান্ত নৈকট্য অর্জন করার চেষ্টা করা উচিত। এখানে আমরা জিলহজ মাসের দলিলভিত্তিক কিছু আমলের বিবরণ উল্লেখ করছি।

এক. হজ করা। এ মাসের ফরজ ও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল হলো হজ করা। যাদের হজে যাওয়ার শক্তি ও সামর্থ্য আছে তাদের ওপর জীবনে একবার হজ করা ফরজ। আল্লাহর এ ফরজ বিধানটির সকল কাজ সম্পাদিত হয় এ মাসেই। এজন্য এ মাসকে হজের মাসও বলা হয়। হজ ইসলামের পাঁচ খুঁটির অন্যতম। হজ করার শক্তি-সামর্থ্য থাকলে হজ করার আগ পর্যন্ত তার ইমান পূর্ণতা পায় না। তাই যাদের ওপর হজ ফরজ তারা যত দ্রুত সম্ভব হজ আদায় করা চেষ্টা করবে। ইমাম মুসলিম রহ., ইমাম আবু দাউদ রহ., ইমাম নাসায়ি রহ.-সহ প্রমুখ উমর রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন :

الْإِسْلَامُ أَنْ تَشْهَدَ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتُقِيمَ الصَّلَاةَ، وَتُؤْتِيَ الزَّكَاةَ، وَتَصُومَ رَمَضَانَ، وَتَحُجَّ الْبَيْتَ إِنِ اسْتَطَعْتَ إِلَيْهِ سَبِيلًا

‘ইসলাম হলো, এ সাক্ষ্য প্রদান যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল, সালাত কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, রমজানের সিয়াম পালন করা এবং হজে যাওয়ার সামর্থ্য থাকলে হজ করা।’ [সহিহু মুসলিম : ৯; সুনানু আবি দাউদ : ৪৬৯৫; সুনানুন নাসায়ি : ৪৯৯০] হাদিসটি সহিহ।

দুই. জিলহজ মাসের প্রথম দশকে অধিক পরিমাণে ইবাদত করা। কেননা, আল্লাহর নিকট এ দশকের আমল অন্য সময়ে করা আমলের চেয়ে অনেক বেশি প্রিয়। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদিসে সুস্পষ্ট ভাষ্য এসেছে। হাদিসে ইবাদতের কোনো ধরণ নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। সুতরাং এ হাদিসের ব্যাপকতায় সালাত, সিয়াম, তিলাওয়াত, দুআ, জিকির, সাদাকা সবই অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং প্রত্যেকের সাধ্যমতো ইবাদত করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করবে। যেমন ইমাম আহমাদ রহ., ইমাম আবু দাউদ রহ., ইমাম ইবনু মাজাহ রহ.-সহ প্রমুখ ইবনু আব্বাস রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন :

مَا مِنْ أَيَّامٍ الْعَمَلُ الصَّالِحُ فِيهَا أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ هَذِهِ الْأَيَّامِ – يَعْنِي أَيَّامَ الْعَشْرِ – قَالَ: قَالُوا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَلا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ؟ قَالَ: وَلا الْجِهَادُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، إِلا رَجُلًا خَرَجَ بِنَفْسِهِ وَمَالِهِ، ثُمَّ لَمْ يَرْجِعْ مِنْ ذَلِكَ بِشَيْءٍ

‘মহান আল্লাহর নিকট যে কোনো দিনের সৎ আমলের চেয়ে যিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের আমল অধিক প্রিয়। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়? তিনি বললেন, না, আল্লাহর পথে জিহাদও নয়। তবে যে ব্যক্তি তার জান-মাল নিয়ে জিহাদে বের হয় এবং কোনো একটি নিয়েও ফিরে না আসে তার কথা স্বতন্ত্র।’
[মুসনাদু আহমাদ : ১৯৬৮; সুনানু আবি দাউদ : ২৪৩৮; সুনানু ইবনি মাজাহ : ১৭২৭] হাদিসটি সহিহ।

তিন. জিলহজ মাসের প্রথম দশকে সালাতের মাধ্যমে রাত্রি জাগরণ করা এবং দিনে নফল সিয়াম রাখা। তবে দশম তারিখে সিয়াম রাখা যাবে না। কেননা, ঈদের দিন হওয়ায় সেদিন সিয়াম রাখা হারাম। রাত্রি জাগরণ ও দিনে সিয়াম পালনের জন্য পূর্বের হাদিসটিই যথেষ্ট। এছাড়াও এ ব্যাপারে ভিন্ন আরেকটি হাদিসও পাওয়া যায়। হাদিসটি সনদগত দিক থেকে দুর্বল হলেও আমলের ক্ষেত্রে তা সহনীয়; বিশেষত যখন এ ব্যাপারে আম (ব্যাপক) অর্থে বিশুদ্ধ হাদিসও বিদ্যমান। ইমাম তিরমিজি রহ., ইমাম বাইহাকি রহ., ইমাম বাগাভি রহ.-সহ প্রমুখ আবু হুরাইরা রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন :

مَا مِنْ أَيَّامٍ أَحَبُّ إِلَى اللَّهِ أَنْ يُتَعَبَّدَ لَهُ فِيهَا مِنْ عَشْرِ ذِي الحِجَّةِ، يَعْدِلُ صِيَامُ كُلِّ يَوْمٍ مِنْهَا بِصِيَامِ سَنَةٍ، وَقِيَامُ كُلِّ لَيْلَةٍ مِنْهَا بِقِيَامِ لَيْلَةِ القَدْرِ

‘এমন কোন দিন নেই যে দিনগুলোর ইবাদত আল্লাহ তাআলার নিকট জিলহজ মাসের দশদিনের ইবাদত হতে অধিক প্রিয়। এই দশদিনের প্রতিটি সিয়াম এক বছরের সিয়ামের সমতুল্য এবং এর প্রতিটি রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমতুল্য।’ [সুনানুত তিরমিজি : ৭৫৮; শুআবুল ইমান : ৩৪৮০; শারহুস সুন্নাহ : ১১২৬] হাদিসটি জইফ।

চার. বিশেষভাবে আরাফা তথা ৯ই জিলহজে সিয়াম রাখা। এ সিয়ামের ফজিলত হলো, এতে পূর্বের এক বছরের ও পরের এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। তাই এ সিয়ামের ব্যাপারে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। উল্লেখ্য যে, জমহুর উলামায়ে কিরামের মতানুসারে এখানে গুনাহ দ্বারা উদ্দেশ্য সগিরা গুনাহ। কেননা, কবিরা গুনাহ মাফ হওয়ার জন্য তাওবা করা জরুরি। তাওবা ছাড়া সাধারণত কবিরা গুনাহ মাফ হয় না। এ সিয়ামের ফজিলতের ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদিস এসেছে। ইমাম মুসলিম রহ., ইমাম আবু দাউদ রহ., ইমাম তিরমিজি রহ., ইমাম ইবনু মাজাহ রহ.-সহ প্রমুখ আবু কাতাদা আনসারি রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইরশাদ করেছেন :

صِيَامُ يَوْمِ عَرَفَةَ، أَحْتَسِبُ عَلَى اللهِ أَنْ يُكَفِّرَ السَّنَةَ الَّتِي قَبْلَهُ، وَالسَّنَةَ الَّتِي بَعْدَهُ

‘আরাফার সিয়ামের ব্যাপারে আমি আল্লাহর নিকট আশাবাদী যে, তিনি এর বিনিময়ে পূর্বের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ মার্জনা করে দেবেন।’ [সহিহু মুসলিম : ১১৬২; সুনানু আবি দাউদ : ২৪২৫; সুনানত তিরমিজি : ৪৭৯; সুনানু ইবনি মাজাহ : ১৭৩০] হাদিসটি সহিহ।

পাঁচ. জিলহজের দশম তারিখে কুরবানি করা। সুতরাং যারা ধনী ও সামর্থ্যবান তারা অবশ্যই কুরবানি করবে। মদিনায় আসার পর থেকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি বছরই কুরবানি দিতেন। সামর্থ্যবানদের জন্য এটা ওয়াজিব আমল। তাই এ ব্যাপারে কোনোরূপ অবহেলা করা যাবে না। কেননা, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কেউ কুরবানি না দিলে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে (ধমকস্বরূপ) মুসলিমদের ঈদগাহে আসতে নিষেধ করেছেন। যেমন ইমাম ইবনু মাজাহ রহ., ইমাম হাকিম রহ., ইমাম দারাকুতনি রহ. প্রমুখ বিশুদ্ধ সনদে আবু হুরাইরা রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইরশাদ করেছেন :

مَنْ كَانَ لَهُ سَعَةٌ، وَلَمْ يُضَحِّ، فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا

‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানি করল না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’
[সুনানু ইবনি মাজাহ : ৩১২৩; মুসতাদরাকুল হাকিম : ৭৫৬৫; সুনানুদ দারাকুতনি : ৪৭৬২] হাদিসটি সহিহ।

ছয়. কুরবানি করা পর্যন্ত নখ ও চুল কাটা থেকে বিরত থাকা। জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার সময় থেকে কুরবানি করার পূর্ব পর্যন্ত নিজের নখ, চুল ও অবাঞ্ছিত পশম কাটা থেকে বিরত থাকবে। জমহুর ফুকাহায়ে কিরামের মতানুসারে এটা মুসতাহাব আমল। এ ব্যাপারে বিশুদ্ধ হাদিসে পরিষ্কার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেমন ইমাম মুসলিম রহ., ইমাম আবু দাউদ রহ., ইমাম ইবনু হিব্বান রহ.-সহ প্রমুখ উম্মু সালামা রা. সূত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি ইরশাদ করেছেন :

مَنْ كَانَ لَهُ ذِبْحٌ يَذْبَحُهُ فَإِذَا أُهِلَّ هِلَالُ ذِي الْحِجَّةِ، فَلَا يَأْخُذَنَّ مِنْ شَعْرِهِ، وَلَا مِنْ أَظْفَارِهِ شَيْئًا حَتَّى يُضَحِّيَ

‘যার কুরবানির পশু রয়েছে, সে যেন জিলহজ মাসের নতুন চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানি করার পূর্ব পর্যন্ত তার চুল ও নখ না কাটে।’ [সহিহু মুসলিম : ১৯৭৭; সুনানু আবি দাউদ : ২৭৯১; সহিহু ইবনি হিব্বান : ৫৯১৭] হাদিসটি সহিহ।

যারা কুরবানি করতে পারবে না তাদের জন্যও এ আমল করার সুযোগ রয়েছে। হাদিসে এটাকে পরিপূর্ণ কুরবানি বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাই যাদের কুরবানি দেওয়ার সামর্থ্য নেই তারাও জিলহজ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে কুরবানি করা পর্যন্ত নিজের নখ, চুল ও অবাঞ্ছিত সব পশম কাটা থেকে বিরত থাকবে এবং ঈদের দিন কুরবানির পর সব কাটবে। ইমাম ইবনু হিব্বান রহ., ইমাম আহমাদ রহ., ইমাম আবু দাউদ রহ., ইমাম নাসায়ি রহ.-সহ প্রমুখ বিশুদ্ধ সনদে আব্দুল্লাহ বিন আমর রা. সূত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন :


أُمِرْتُ بِيَوْمِ الْأَضْحَى عِيدًا جَعَلَهُ اللَّهُ لِهَذِهِ الْأُمَّةِ، فَقَالَ الرَّجُلُ : أَفَرَأَيْتَ إِنْ لَمْ أَجِدْ إِلَّا مَنِيحَةَ أُنْثَى، أَفَأُضَحِّي بِهَا؟ قَالَ : لَا، وَلَكِ تَأْخُذُ مِنْ شَعْرِكَ، وَتُقَلِّمُ أَظْفَارَكَ، وَتَحْلِقُ عَانَتَكَ، وَتَقُصُّ شَارِبَكَ، فَذَلِكَ تَمَامُ أُضْحِيَتِكَ عِنْدَ اللَّهِ.

‘আমি কুরবানির দিনকে ঈদ উদযাপন করতে আদিষ্ট হয়েছি। আল্লাহ এ দিনটিকে এ উম্মতের জন্য (ঈদ হিসেবে) নির্ধারণ করেছেন। এক ব্যক্তি বলল, বলুন তো, আমার কাছে যদি (দুগ্ধপানের জন্য) অন্যের দেওয়া একটি মাদী পশু থাকে তাহলে কি আমি তা দ্বারা কুরবানি করব? তিনি উত্তরে বললেন, না। তবে তুমি তোমার চুল কাটবে, নখ কাটবে, নাভীর নিচের পশম মুণ্ডাবে এবং গোঁফ ছোট করবে। এটাই হবে আল্লাহর নিকট তোমার পূর্ণাঙ্গ কুরবানি।’ [সহিহু ইবনি হিব্বান : ৫৯১৪; মুসনাদু আহমাদ : ৬৫৭৫; সুনানু আবি দাউদ : ২৭৮৯; সুনানুন নাসায়ি : ৪৩৬৫] হাদিসটি সহিহ।

সাত. তাকবিরে তাশরিক পড়া। বিশুদ্ধতম মতানুসারে ৯ই জিলহজের ফজরের সালাত থেকে থেকে ১৩ই জিলহজের আসর পর্যন্ত প্রতি ফরজ সালাতের পর একবার করে তাকবিরে তাশরিক পাঠ করবে। এটা ওয়াজিব আমল, তাই ইচ্ছাকৃতভাবে ছেড়ে দেবে না। এ ব্যাপারে সাহাবিদের একাধিক বিশুদ্ধ আসার বর্ণিত হয়েছে। যেমন ইমাম ইবনু আবি শাইবা রহ., ইমাম বাইহাকি রহ.-সহ প্রমুখ বিশুদ্ধ সনদে শাকিক রহ. ও আবু আব্দির রহমান রহ. সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তাঁরা (শাকিক রহ. ও আবু আব্দির রহমান রহ.) আলি রা.-এর ব্যাপারে বলেছেন :

أَنَّهُ كَانَ يُكَبِّرُ بَعْدَ صَلاَةِ الْفَجْرِ يَوْمَ عَرَفَةَ إِلَى صَلاَةِ الْعَصْرِ مِنْ آخِرِ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ ، وَيُكَبِّرُ بَعْدَ الْعَصْرِ

‘আলি রা. আরাফা দিবস তথা ৯ই জিলহজের ফজরের সালাতের পর থেকে আইয়ামে তাশরিকের শেষ দিন তথা ১৩ই জিলহজের আসর পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক পড়তেন। আসরের পরও তিনি তাকবিরে তাশরিক পড়তেন।’
[মুসান্নাফু ইবনু আবি শাইবা : ৫৬৭৭; আস-সুনানুল কুবরা, বাইহাকি : ৬৪৯৭] হাদিসটি সহিহ।

ইমাম বাইহাকি রহ. বিশুদ্ধ সনদে ইকরামা রহ. সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তিনি (ইকরামা রহ.) ইবনু আব্বাস রা.-এর ব্যাপারে বলেছেন :

أَنَّهُ كَانَ يُكَبِّرُ مِنْ غَدَاةِ عَرَفَةَ إِلَى صَلاَةِ الْعَصْرِ مِنْ آخِرِ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ

‘ইবনু আব্বাস রা. আরাফা দিবস তথা ৯ই জিলহজের ফজরের সালাতের পর থেকে আইয়ামে তাশরিকের শেষ দিন তথা ১৩ই জিলহজের আসর পর্যন্ত তাকবিরে তাশরিক পড়তেন।’ [আস-সুনানুল কুবরা, বাইহাকি : ৬৪৯৮] হাদিসটি সহিহ।

আমরা সাধারণত যে তাকবিরে তাশরিক পড়ে থাকি, সেটাই তাকবিরে তাশরিক। অবশ্য এটা ছাড়াও আরও বেশ কিছু তাকবিরে তাশরিকের বাক্যও পাওয়া যায়। সেগুলো পড়লেও আদায় হয়ে যাবে, কোনো সমস্যা নেই। তবে আমাদের পঠিত তাকবিরে তাশরিকটাই অধিক প্রসিদ্ধ। সাহাবি ও তাবিয়িযুগে এটা প্রসিদ্ধ ছিল। যেমন বিশুদ্ধ সনদে ইমাম ইবনু আবি শাইবা রহ. ইবরাহিম নাখয়ি রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেছেন :


كَانُوا يُكَبِّرُونَ يَوْمَ عَرَفَةَ وَأَحَدُهُمْ مُسْتَقْبِلٌ الْقِبْلَةَ فِي دُبُرِ الصَّلاَة : اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّ الْحَمْدُ.

‘তাঁরা (সাহাবা ও তাবিয়িন) আরাফা দিবস তথা ৯ই জিলহজ সালাতের পর নিম্নোক্ত তাকবির পাঠ করতেন, যখন তাদের কেউ (অর্থাৎ ইমাম) কিবলামুখী হয়ে থাকতেন। তাঁরা সবাই পড়তেন- “আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।”’ [মুসান্নাফু ইবনু আবি শাইবা : ৫৬৩২] হাদিসটি সহিহ।

ফরজ-ওয়াজিব-সুন্নাহ-মুসতাহাব মিলিয়ে সামগ্রিকভাবে আমরা জিলহজ মাসের দলিলভিত্তিক এ সাতটি আমল লিপিবদ্ধ করেছি। আমভাবে এতে জিলহজ মাসের প্রায় সব আমলই চলে এসেছে। তবে উপরে বর্ণিত দ্বিতীয় আমলের ব্যাপকতায় আমরা খাসভাবে (নির্দিষ্টভাবে) আরও অনেক আমল যুক্ত করতে পারি। যেমন- নফল সালাত ও সিয়ামের পাশাপাশি অধিক পরিমাণে তিলাওয়াত করা, আল্লাহর জিকির করা, দান-সাদাকা করা, তাওবা-ইসতিগফার করা, দুআ ও কান্নাকাটি করা ইত্যাদি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, গুনাহ ও আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকা।

মোটকথা, এ মহাগুরুত্বপূর্ণ সময়গুলোর যেন আমরা সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে পারি, সে ব্যাপারে পুরোপুরি সচেষ্ট থাকা। তর্ক-বিতর্ক, নিন্দা-সমালোচনা, আড্ডা-গল্প ও সময় নষ্ট করার সকল উপকরণ থেকে দূরে থেকে এ মূল্যবান দিনগুলো যেন কাজে লাগে, আল্লাহর কাছে আমরা সে প্রার্থনাই করি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন।

আলোচনাঃ মুফতি তারেকুজ্জামান হাফিঃ

About the author
Fawzul Kabir

Leave a Comment