ইব্রাহিম আলাইহি ওয়াসাল্লামের কুরবানী

Spread the love

 একরাতে ঘুমুচ্ছিলেন হযরত ইব্রাহিম আ.। স্বপনে দেখলেন কোরবানি করার। পরেরদিন ইব্রাহিম আ. একশত উট কোরবানি দিলেন। পরেরদিন রাত্রে একই স্বপ্ন আবারো দেখলেন, আবারো একশত উট কোরবানি দিলেন। এভাবে তিনবার হলো। চতুর্থবার স্বপ্ন দেখলেন ‘নিজের কোন প্রিয় বস্তুকে কুরবানি করতে বললেন।’ ইব্রাহিম আ. যেহেতু নবী ছিলেন বুঝতে আর দেরি হলোনা আল্লাহ তাআলা কী চেয়েছেন। আল্লাহ তাআলা চেয়েছিলেন নিজের প্রিয় পুত্র ইসমাইল আ.কে কোরবানি  দিতে।

ইব্রাহিম আ. সন্তানহীন ছিলেন পঁচাশি বছর। এরপর রবের নিকট প্রার্থনা করলেন,হে আমার পরওয়ারদেগার! আমাকে একজন সৎপুত্র দান করুন।১ । আল্লাহ তাআলা ইব্রাহিম আ. এই দোআ কবূল করলেন এবং এক সহনশীল পুত্রের সুসংবাদ দান করলেন।২ সূরা সাফফাত ১০১। এরপর স্বীয় মোহাব্বতের সন্তান ও স্ত্রীকে আল্লাহর আদেশে বিস্তৃত  মরুভূমিতে রেখে আসেন। শুধু এতটুকু নয়, এর পূর্বে অনেক পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ইব্রাহিম আ. কে।

এবার সম্মুখীন হচ্ছেন নতুন আরেকটি পরীক্ষায়, যেটি স্বপ্নে দেখেছিলেন। ইসমাইল আ.’র বয়স সবে মাত্র তেরো হলো। যে বয়সে সন্তান খেলাধুলা করে। মা হাজেরাকে বললেন, ছেলেকে কাপড় পরিয়ে দাও, ঘুরতে যাব। ইব্রাহিম আ. যাবতীয় সরঞ্জাম সহ পুত্রকে নিয়ে বের হলেন। কিছুদূর যেতে পুত্রকে বললেন, হে আমার পুত্র! আমি স্বপ্নে দেখেছি তোমাকে যবেহ করতে। এতে তোমার অভিমত কী? পুত্র ইসমাইল বললেন— হে আমার পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে, তাই করুন। আল্লাহ চাহে তো আপনি আমাকে সবরকারী পাবেন।৩ সুবহানাল্লাহ!

যেমন পিতা তেমন সন্তান! আমরা হলে বলা মাত্রই ছুটে পালাতাম। প্রাণপণে চেষ্টা করতাম নিজেকে রক্ষা করার। কিন্তু ইসমাইল আ. তার উল্টো। ইব্রাহিম আ. এর কথায় স্বেচ্ছায়, স্ব-জ্ঞানে সাঁই দিলেন। কোনপ্রকার অজুহাত দেখাননি। পৌঁছে গেলেন যথার্থ স্থানে। শায়িত হলেন পুত্র ইসমাইল। ছুরি দিয়ে যবেহ করার চেষ্টা করলে ব্যর্থ হন ইব্রাহিম আ.। কোনভাবে যবেহ করা যাচ্ছেনা। পুত্র ইসমাইল বললেন, হে আমার পিতা! হয়তো আমার চোখাচোখি হওয়ায় মোহাব্বত বাঁধা হয়ে দাড়িয়েছে। আমাকে উপুড় করে শায়িত করুন। ঠিক তাই করলেন। এরপর ছুরি চালালে ব্যর্থ হন।

সাথে আল্লাহ তাআলা জিবরাইল আ. কে আদেশ দিলেন বেহেশত থেকে একটি দুম্বা ইসমাইল আ. এর জায়গায় বসিয়ে দেওয়ার জন্য। আল্লাহ তাআলা এরশাদ ফরমান— আমি তার( শিশু ইসমাইল) পরিবর্তে দিলাম যবেহ করার জন্যে এক মহান জন্তু।

ইব্রাহিম আ. পূর্বের কৃত পরীক্ষার মতো এই পরীক্ষায়ও পাশ হলেন। এতে আল্লাহ তাআলা অত্যন্ত খুশি হোন। আল্লাহ তাআলা এরশাদ ফরমান— তখন আমি তাকে ডেকে বললামঃ হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালে! আমি এভাবেই সৎকর্মীদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।৫ নিশ্চয় এটা এক সুস্পষ্ট পরীক্ষা।৬

রেফারেন্স :

১. সূরা সাফফাত ১০০
২. সূরা সাফফাত ১০১
৩. সূরা সাফফাত ১০২
৪. ৪সূরা সাফফাত ১০৭
৫. সূরা সাফফাত ১০৪-১০৫।
৬. সূরা সাফফাত ১০৬

লিখেছেনঃ মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম

About the author
Fawzul Kabir

Leave a Comment