রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর ইনসাফের দ্যুতিময় ইতিহাস

Spread the love

আরবি পঞ্জিকাবর্ষ অনুযায়ী ৮ম হিজরির কথা। এটাই মক্কা বিজয়ের ঐতিহাসিক সেই বছর। মুসলিমগণ হিজরত পূর্ব সময়ে আপন ভূমিতে যে চরম অপমান, অত্যাচার, নিপীড়ন, নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিল আজ তারা সেই একই ভূমিতে বিজয়ী পরাশক্তি। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইচ্ছা করলেই মক্কার পৌত্তলিকদের ঘৃণিত সকল কৃতকর্মের প্রতিদান পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বুঝিয়ে দিতে পারতেন। তার একটি মাত্র ইশারায় পৃথিবী থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত ধূলিময় মক্কায় মুশরিকদের পদচিহ্ন। কিন্তু তিনি তো রহমতের নবী (ﷺ), তিনি কি করে প্রতিশোধ পরায়ণ হতে পারেন। রহমতের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) রচনা করলেন ক্ষমার অনিন্দ্য সুন্দর এক মহাকাব্য। সত্য নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) সৃষ্টি করলেন মহানুভবতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। জুলুমকারীদের উপর মাজলুমের বিজয় সত্যেও তাদের ক্ষমা করে দেয়ার দৃষ্টান্ত যে তাবৎ পৃথিবীর ইতিহাসেই বিরল। মক্কার অত্যাচারী প্রতিটি মানব সেদিন মুক্ত পাখির ন্যায় পুনরায় নীল আকাশে ডানা মেলে উড়ে বেড়ানোর স্বাধীনতা পেয়েছিল।
.
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর ক্ষমা ও মহানুভবতার এমন উজ্জ্বল দৃষ্টান্তে মুগ্ধ হয়ে ইসলামের পতাকাতলে আশ্রয় গ্রহণ করে অগণিত সত্যান্বেষী প্রাণ। এই দলের অগ্রগামী পথিক মক্কার অন্যতম কূটকৌশলী ও নেতা আবু সুফিয়ান ইবনে হারব (রাঃ), পরবর্তী সময়ে তার স্ত্রী হিন্দা যিনি কিনা নবী (ﷺ)-এর প্রিয় চাচা হামযা (রাঃ)-এর শহীদী শরীর যুদ্ধের ময়দানে ক্ষতবিক্ষত করার জন্য সমালোচিত এবং তাদের দুই পুত্র ইয়াজিদ ও মুআবিয়া (রাঃ)। পাঠক এবার নিজেই কল্পনা করুন এক সময়ের চরম ইসলাম বিদ্বেষী ও কূটকৌশলী নেতার পরিবার যখন স্বেচ্ছায় নবী (ﷺ)-এর মহানুভবতায় মুগ্ধ হয়ে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয় তখন সাধারণ মক্কাবাসীর কি অবস্থা ছিল? এক ফোঁটা মধুর জন্য পিঁপড়েরা যেভাবে ভিড় করে সেদিন মক্কাবাসী শাহাদাহ উচ্চারণের জন্য ঠিক সেভাবেই ভিড় করেছিল।
.
শাহাদাহ উচ্চারণের মিছিলে সকলেই শামিল হলে কতই না ভাল হত। অথচ মানুষ স্বাভাবিক অবস্থায় যেমন চিন্তা করে সব সময় যে তেমনটা হয় না। সেদিনও তার ব্যত্যয় ঘটেনি। মালিক বিন আওফ এর নেতৃত্বে হাওয়াযিন ও সাক্বিফ নামের আত্মগর্বে বলিয়ান ও অপরিণামদর্শী দুটি গোত্র এবং কিছু পথভ্রষ্ট প্রাণ মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের প্রস্তুতি নিতে থাকে। অপরিণামদর্শিতা ও স্বেচ্ছাচারিতা তাদেরকে সত্য থেকে ঠেলে দিয়েছিল বহুদূরে। আত্ম-অহংকারে বলিয়ান এই মানুষগুলোর কাছে নবী (ﷺ) কর্তৃক ক্ষমা প্রাপ্ত হয়ে মহা সত্যের অনুসারী হওয়া ছিল অপমানের, লজ্জার। কতই না অভাগা সেই সম্প্রদায় যারা সত্যের এত নিকটে থেকেও তা উপলব্ধি করতে পারেনি বরং সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেয়ার কূটকৌশলে ব্যস্ত ছিল।
.
হাওয়াযিন ও সাক্বিফ গোত্র যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে হুনাইন উপত্যকার পাশে আওতাস উপত্যকায় অবস্থান নেয়। সে সময় তাদের নেতা মালিক বিন আওফের মধ্যে বিচার বিবেচনাহীন এক চরম ধৃষ্টতা পরিলক্ষিত হয়। তার নির্দেশে হাওয়াযিন ও সাক্বিফ গোত্রের লোকেরা তাদের পরিবারের নারী, শিশু, উট, বকরী ও রৌপ্যসহ সকল প্রকার ধন সম্পদ নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে সমবেত হয়। মানুষ কতটা ধৃষ্টতা ও আত্ম-অহংকারে অন্ধ হলে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারে ভাবা যায়? সেই বিদ্রোহী কাফেলায় বয়সের ভারে নুইয়ে পড়া তারুণ্যের তুখোড় যোদ্ধা দুরাইদ বিন সিম্মাও ছিল। সে নারী, শিশুসহ সকল প্রকার ধন সম্পত্তি সাথে করে নিয়ে আসার হেতু সম্পর্কে জানতে চাইলে, মালিক বিন আওফ বলে,
“যোদ্ধারা তাদের প্রাণ প্রিয় পরিজন ও তাদের ধন সম্পত্তি রক্ষার জন্যে হলেও প্রবল তেজদীপ্ততায় যুদ্ধ করবে; এসকল কিছু ফেলে রেখে রণাঙ্গন ছেড়ে পলায়ন করবে না। এর ফলে, মুসলমানদের অনিবার্য পরাজয় হবে।”
.
মালিক বিন আওফের এহেন আত্মগর্বী ও চরম ধৃষ্টতামূলক বক্তব্য শুনে যুবক বয়সের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন তুখোড় যোদ্ধা দুরাইদ বিন সিম্মা বলে,
“হে মালিক বিন আওফ! তুমি পরাজিত হওয়ার ব্যাপারে কেন বিবেচনা করলে না? এমন যদি হয় তোমরা মুসলমানদের কাছে পরাস্ত হলে, তখন তোমাদের অবস্থা কি হবে? সব কিছুই যে যুদ্ধালব্ধ গণিমত হিসেবে মুসলমানদের হস্তগত হয়ে যাবে। আর তোমরা হয়ে যাবে একেবারে নিঃস্ব।”
.
দুরাইদ বিন সিম্মা এই বক্তব্য দিয়েই থেমে যায়নি। সে হাওয়াযিন ও সাক্বিফ গোত্রের সকলকে পরামর্শ দেয়, তারা যেন তাদের সাথে নিয়ে আসা নারী, শিশু, ও সহায় সম্পদ আওতাস উপত্যকা থেকে কিছু দূরে নিরাপদ স্থানে লুকিয়ে রাখে। যদি তারা মুসলিমদের উপর জয় লাভ করতে পারে, তবে সকলে পুনরায় একত্রিত হবে নতুবা সহায় সম্পত্তি সহ নিজ গোত্রে ফিরে যাবে। কিন্তু আত্ম-অহংকারী নেতা মালিক বিন আওফ তার কথা ঘুণাক্ষরেও কানে তোলে নি। সে তার সিদ্ধান্তেই অটল ছিল এবং অন্যদের এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে বাধ্য করেছিল।
.
এই দিকে মুসলিম বাহিনী মক্কা বিজয় পরবর্তী সময়ে সেখানেই অবস্থানরত ছিল। হাওয়াযিন ও সাক্বিফ গোত্রের বিদ্রোহের সংবাদ পেয়ে সকলেই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। মুসলমানদের কাছে খবর ছিল হুনাইন উপত্যকার পাশেই শত্রু বাহিনী শিবির স্থাপন করেছে। তথাপি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) মক্কা থেকে মুসলিম সৈন্য বহর নিয়ে হুনাইন অভিমুখে যাত্রা করেন।
.
এই দিকে মালিক বিন আওফ মুসলিম বাহিনীর আগমনের খবর পেয়ে পুনরায় কূটকৌশল নির্ধারণে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সে পরিকল্পনা করে মুসলিম বাহিনী হুনাইন উপত্যকায় পৌঁছানোর সাথে সাথে তাদের উপর বিনা মেঘে বজ্রপাতের ন্যায় অতর্কিত তীর নিক্ষেপ ও সশস্ত্র আক্রমণের।
.
মুসলিম বাহিনী পূর্ব থেকেই অবগত রয়েছে যে, প্রতিপক্ষ হুনাইন উপত্যকার আশেপাশেই শিবির স্থাপন করেছে। কিন্তু শত্রু সেনার সুনির্দিষ্ট অবস্থান সম্পর্কে কোন তথ্য মুসলিম বাহিনীর কাছে ছিল না। এইদিকে তারা হুনাইন উপত্যকায় পৌঁছানোর সাথে সাথেই পূর্ব পরিকল্পনার অংশ হিসেবে বিদ্রোহী মুশরিকরা বৃষ্টির ন্যায় প্রবল বেগে তীর বর্ষণ শুরু করে। সদলবলে মুসলিম বাহিনীর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে হাওয়াযিন ও সাক্বিফ গোত্রের সশস্ত্র যোদ্ধারা। অতর্কিত এই আক্রমণে মুসলিম বাহিনী দিক্বিদিক ছুটাছুটি শুরু করে। মুসলিম বাহিনীর এই অনাকাঙ্ক্ষিত অবস্থা উপলব্ধি করে অনেকেই রণাঙ্গন ছেড়ে পলায়ন করে। মুসলমানদের এহেন পরিণতি প্রত্যক্ষ করে সদ্য মুসলিম হওয়া আবু সুফিয়ান বিন হারব (রাঃ) বলে উঠলেন,
“এখন তাদের দৌড়াদৌড়ি সমুদ্রের আগে আর থামবে না।”
এরকমই একজন নও মুসলিম কালাদাহ বিন হাম্বল চিৎকার করে বললেন,
“দেখ, দেখ, তাদের জাদু বাতিল হয়ে গেল”
.
মুসলিম বাহিনীর এমন শোচনীয় অবস্থা প্রত্যক্ষ করে নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) সকল মুসলিম যোদ্ধাদের আহ্বান করতে থাকেন,
“হে লোক সকল! আমি মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ! তোমাদের আহ্বান করছি। তোমরা আমার কণ্ঠ অভিমুখে প্রত্যাবর্তন কর।”
.
নবী (ﷺ) আহ্বানে অল্প সংখ্যক মুহাজির ও আনসার সাহাবী সাড়া দিয়েছিল। বিশুদ্ধ বর্ণনা মতে এই সংখ্যাটি ছিল মাত্র ৮০ জন। এসময় নবী (ﷺ) -এর নেতৃত্ব গুণ পুনরায় একবার প্রমাণিত হয়। এহেন সংকটপূর্ণ পরিস্থিতিতেও তিনি তার বাহন পশুটিকে শত্রু অভিমুখে প্রতিনিয়ত উত্তেজিত করতে থাকেন এবং বলতে থাকেন,
“আমি সত্য নবী, মিথ্যা নই। আমি আবদুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র।”
.
এই পরিস্থিতিতে আবু সুফিয়ান বিন হারিস (রাঃ) তার বাহন পশুটির লাগাম ধরে রাখেন। নবী (ﷺ)-এর চাচা আব্বাস (রাঃ) বাহনের রেকাব ধরে থামিয়ে রেখেছিলেন যাতে তিনি শত্রু অভিমুখে দ্রুত গতিতে এগিয়ে না যান। এরপর নবী (ﷺ) তার চাচা আব্বাস (রাঃ)-কে সকল সাহাবীদের আহ্বান করার নির্দেশ দেন। আব্বাস (রাঃ) ছিলেন দরাজ কণ্ঠ বিশিষ্ট। তার আহ্বানে একে একে সকলে এমন ভাবে ফিরে আসে যেমন ভাবে দাড় কাকের হাত থেকে রক্ষা পেতে এদিক সেদিক ছড়িয়ে থাকা মুরগির ছানারা তার মায়ের কাছে আশ্রয় নেয়। মুহূর্তেই সেখানে প্রাণপণ যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। মিথ্যাকে ধ্বংস করতে সত্যের লড়াই। এরপর নবী মুহাম্মাদ (ﷺ) এক মুষ্টি মাটি হাতে নিয়ে শত্রু অভিমুখে নিক্ষেপ করেন, আর বলেন,
“চেহারা সমূহ বিকৃত হোক।”
.
শত্রু শিবিরে একজন মাত্র ব্যক্তির চক্ষুও এই মাটির সংস্পর্শ থেকে রেহাই পায়নি। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই শত্রুপক্ষের অবস্থা নাজেহাল হয়ে পড়ে। তারা শোচনীয় ভাবে পরাজিত হয়। তাদের প্রায় ৭০ জন লোক নিহত হয়। বাদ বাকি সবাই বিভিন্ন দিকে পলায়ন করে। নেতৃত্ব স্থানীয়দের নিয়ে একটি দল ত্বায়িফ অভিমুখে ফিরে যায়। এভাবেই সত্যের কাছে মিথ্যের শোচনীয় পরাজয়ের উপাখ্যান পুনরায় রচিত হয়।
.
এই যুদ্ধ সম্পর্কে আল্লাহ্‌ তাআলা পবিত্র কোরআনের বলেন,
বস্তুত: আল্লাহ তোমাদেরকে বহু যুদ্ধ ক্ষেত্রে সাহায্য করেছেন আর হুনাইনের যুদ্ধের দিন, তোমাদের সংখ্যার আধিক্য তোমাদেরকে গর্বে মাতোয়ারা করে দিয়েছিল, কিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি, জমিন সুপ্রশস্ত হওয়া সত্যেও তা তোমাদের নিকট সংকীর্ণই হয়ে গিয়েছিল, আর তোমরা পিছন ফিরে পালিয়ে গিয়েছিলে। তারপর আল্লাহ তাঁর রসূলের উপর, আর মুমিনদের উপর তাঁর প্রশান্তির অমিয়ধারা বর্ষণ করলেন, আর পাঠালেন এমন এক সেনাবাহিনী যা তোমরা দেখতে পাওনি, আর তিনি কাফিরদেরকে শাস্তি প্রদান করলেন। এভাবেই আল্লাহ কাফিরদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকেন। [সূরাঃ আত-তাওবাহ্‌, আয়াতঃ ২৫-২৬]
.
আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু তাআলার প্রত্যক্ষ সাহায্যে মুসলিম উম্মাহ পুনরায় কুফফার শক্তির বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে। শুধু তাই নয় মালিক বিন আওফের ধৃষ্টতার ফলাফল স্বরূপ মুসলমানগণ বিপুল পরিমাণ সম্পদ গণিমত হিসেবে লাভ করে। এর মধ্যে ছিল:- ছয় হাজার যুদ্ধবন্দী, চব্বিশ হাজার উট, চল্লিশ হাজারের অধিক বকরী এবং চার হাজার উকিয়া রৌপ্য আধুনিক হিসেবে মতে যার পরিমাণ ছয় কুইন্টাল থেকে কয়েক কেজি কম। নবী (ﷺ) এই সকল যুদ্ধালব্ধ গণিমত জিরানা নামক স্থানে সংরক্ষিত রাখেন। মাসউদ বিন আমর গিফারী (রাঃ)-কে এসকল গণিমতের তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত করে একটি বাহিনীসহ ত্বায়িফ অভিমুখে যাত্রা করেন।
.
মালিক বিন আওফ ও তার সঙ্গী সাথীরা হুনাইন থেকে পিছু হটে ত্বায়িফের একটি দুর্গে অবস্থান নেয়। সেখানে থেমে থেমে বেশ কয়েকবার যুদ্ধ হয়। সেখানে মালিক বিন আওফ ও তার সঙ্গী সাথীরা প্রায় এক বছরের রসদ সাথে করে নিয়ে দুর্গে অবস্থান নিয়েছিল। ফলে তারা একে তো সেখান থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করত না। অন্যদিকে মুসলিম সৈন্য তাদের দুর্গের নিকটবর্তী হলে উত্তপ্ত পাথর ও গরম তৈল নিক্ষেপ করত। এমন কাপুরুষসুলভ আক্রমণে বেশ কয়েক জন মুসলিম সাহাবী শহিদ হন। নবী (ﷺ) সেখানে বেশ কিছুদিন অবস্থান করেন।
.
পরবর্তীতে আবারো সম্মুখ যুদ্ধের চেষ্টা করা হয় কিন্তু হাওয়াযিন ও সাক্বিফ গোত্র এতেও সাড়া দেয়নি। ফলে, ত্বায়িফ যুদ্ধ অমীমাংসিত ভাবেই শেষ হয়। ফিরে আসার পূর্বে নবী (ﷺ)-কে হাওয়াযিন ও সাক্বিফ গোত্রদ্বয়কে বদ দুআ করতে বলা হলেও তিনি তাদের হেদায়েতের জন্য দুআ করেন, দ্বীনে ফিরে আসার দুআ করেন।
.
জিরানা নামক স্থানে প্রত্যাবর্তনের পর নবী (ﷺ) যুদ্ধালব্ধ বিপুল পরিমাণ গণিমত বণ্টন ব্যতীত সেখানে অবস্থান করতে থাকেন। তিনি আশা করছিলেন যে হাওয়াযিন ও সাক্বিফ গোত্র থেকে একটি প্রতিনিধিদল এসে ক্ষমা প্রার্থনা পূর্বক এহেন বিপুল পরিমাণ সম্পদ ও যুদ্ধবন্দীদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু রহমতের নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর এহেন সদিচ্ছা সত্যেও কোন প্রতিনিধিদল সে সময় আসেনি। ফলে, তিনি এক প্রকার বাধ্য হয়েই গণিমতের মাল বণ্টন শুরু করেন।
.
এই বিশাল সংখ্যক গণিমতের মাল বণ্টন করতে গিয়ে নবী (ﷺ) একটি বিশেষ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করেন। পৃথিবীতে অনেক লোক আছে, যারা দ্বীনে ফিরে নিজ বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে সত্য উপলব্ধি করে, আবার অনেকে ফিরে পেটের দায়ে। হুনাইন যুদ্ধের প্রাথমিক অবস্থায় যখন মুসলমানদের বিপর্যয় পরিলক্ষিত হয়, তখন নও মুসলিম হিসেবে আবু সুফিয়ান বিন হারব (রাঃ) ও কালাদাহ বিন হাম্বল (রাঃ) এক প্রকার অযাচিত মন্তব্য করে বসে।
.
সেই সময় তাদের বক্তব্যের মত অনেকেই এমন অযাচিত কথা বার্তা বলত। যাদের অধিকাংশই ছিল নওমুসলিম। প্রবল দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নবী (ﷺ) চেয়েছিলেন এই সকল মানুষ গুলোর এমন অযাচিত কথা বার্তায় লাগাম টানতে। তিনি নওমুসলিমদের এটা উপলব্ধি করাতে চেয়েছিলেন, মুসলিমগণ ইহজাগতিক ও আখিরাত উভয় দিক থেকেই সর্বাপেক্ষা লাভবান। এই উদ্দেশ্য নিয়েই তিনি গণিমত বণ্টন প্রক্রিয়া শুরু করেন। এরফলে দেখা যায়, মক্কার নও মুসলিমরা অধিক পরিমাণ সম্পদ প্রাপ্ত হয়।
এক্ষেত্রে কয়েকজনের কথা না বললেই নয়। আবু সুফিয়ান বিন হারব (রাঃ) গণিমত হিসেবে পান, ৪০ উকিয়া রৌপ্য (ছয় কেজি থেকে কিছুটা কম) ও ১০০ উট। এরপর তিনি তার দুই সন্তানের ব্যাপারে বললে, নবী (ﷺ) তাদেরকেও অনুরূপ সম্পদ প্রদান করেন।
.
পরমুহূর্তেই নবী (ﷺ) যায়দ বিন সাবিত (রাঃ)-কে সর্বসাধারণের জন্য গণিমত বণ্টনের হিসেব করতে বলেন। সেই হিসেব অনুযায়ী, প্রত্যেক ঘোড় সোওয়ারগণ ১২টি উট ও ১২০টি করে বকরী প্রাপ্ত হন। অন্যদিকে প্রত্যেক সাধারণ সৈনিকের ভাগে জোটে ৪টি উট ও ৪০টি করে বকরী। এক্ষেত্রেও মক্কার নওমুসলিমগণ অগ্রাধিকার প্রাপ্ত হন। গণিমত বণ্টনকালে সাময়িক হুলস্থূলের এক পর্যায়ে নবী (ﷺ)-এর গায়ের চাদরটি একটি গাছের সাথে জড়িয়ে যায়। এমতাবস্থায় তিনি তার উটের কাছে উপস্থিত হন। উটের শরীর থেকে সামান্য কিছু পশম চিমটিতে নিয়ে তিনি বলেন,
“এই সম্পদ থেকে এই পশম পরিমাণ অংশও আমি নিজের জন্য রাখব না। সকল সম্পদ তোমাদের মাঝেই বণ্টন করে দেব। এমনকি এক পঞ্চমাংশ যা আমার জন্য নির্ধারিত সেটুকুও বণ্টন করে দেব।”
.
এই দিকে মক্কার নওমুসলিমদের এহেন সম্পদ প্রাপ্তি প্রত্যক্ষ করে আনসারদের মধ্যে এক প্রকার সন্দেহের বীজ উদিত হয়। তারা মনে করতে থাকে নবী (ﷺ) তার গোত্র ও জন্মভূমির মানুষের প্রতি অনুরাগী হয়ে পড়েছেন। এই প্রেক্ষিতে একজন বলেই বসেন,
“রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তার কওমের সাথে মিশে গিয়েছেন।”
.
সাদ (রাঃ) আনসারদের এহেন শোচনীয় ও বিভ্রান্তিকর অবস্থা প্রত্যক্ষ করে নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর কাছে এই ব্যাপারে অভিযোগ পেশ করেন। বলা বাহুল্য, আনসাররাও মানুষ, তাদের মনেও এলোমেলো ভাবনা চিন্তা ঘুরপাক খায়। তাছাড়া শয়তান তো আছেই বিষ ঢালার জন্য। এমতাবস্থায়, তাদের ভাবনায় ছিল, দুঃসময়ে পলায়নকারীর হাত আজ পূর্ণ অথচ বীরবিক্রমে যুদ্ধ করা আনসারদের হাত শূন্য। মূলত আনসাররা নবী (ﷺ)-এর সুগভীর ও দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পরিকল্পনা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হওয়ার দরুন এমন ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়। সাদ (রাঃ)-এর অভিযোগের প্রেক্ষিতে নবী (ﷺ) বলেন,
“এই বিষয়ে তোমার কি অভিমত সাদ?”
“ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমি তো আমার কওমের বাইরে নই।”
.
সাদ (রাঃ) এমন বক্তব্য শ্রবণ করে রাসূল (ﷺ) তাকে নির্দেশ দেন সকল আনসারদের আলাদা একটি স্থানে সমবেত করার। সেখানে কিছু মুহাজির সাহাবী প্রবেশ করতে চাইলে তাদের অনুমতি দেয়া হয়। পুনরায় ভিন্ন কিছু সাহাবী আসতে চাইলে তাদের অনুমতি দেয়া হয়নি। সেই স্থানে তিনি বলেন,
“হে আনসারগণ! তোমরা কোন কারণে আমার ব্যাপারে এমন মনোভাব পোষণ করছ? আমি কি তোমাদের পথভ্রষ্ট অবস্থায় পাইনি? আল্লাহ্‌ তোমাদের হিদায়াত দিয়েছেন। তোমরা কি অসহায় ছিলে না? আল্লাহ্‌ তোমাদের সহায় সম্বল দান করেছেন। তোমরা কি পরস্পর পরস্পরের শত্রু ছিলে না? আল্লাহ্‌ তোমাদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ব বোধ সৃষ্টি করে দিয়েছন। হে আনসারগণ! তোমরা কিছু বলছ না কেন?”
.
আনসারগণ সকলে একসাথে উত্তর দিল,
“ইয়া রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমরা কি বলব? এ তো আল্লাহ্‌ এবং তার রাসূল (ﷺ)-এর একান্ত অনুগ্রহ।”
.
রাসূল (ﷺ) আবার বললেন, আল্লাহর কসম! আজ তোমরা বল! আজ তোমাদের কথা শোনা হবে। তোমরা আজ বলতে পার,
“আপনি এমন অবস্থায় আমাদের নিকট এসেছিলেন যখন আপনাকে মিথ্যাবাদী অপবাদ দেয়া হয়েছিল, আমরাই আপনাকে সত্য নবী হিসেবে গ্রহণ করেছি। তখন আপনি সহায় সম্বল ও বন্ধুবান্ধব-হীন ছিলেন, আমরা আপনাকে সাহায্য করেছিলাম; সঙ্গ দিয়েছিলাম। আপনাকে তখন বিতাড়িত করা হয়েছিল, আমরা আপনাকে আশ্রয় দিয়েছিলাম। এসকল কথা অবশ্যই সত্য।”
.
অতঃপর তিনি পুনরায় বলতে শুরু করেন,
“আজ তোমরা সামান্য ঘাসের (গণিমত) জন্য নিজের অন্তরে অসন্তুষ্ট হয়ে উঠেছ অথচ আমি এর মাধ্যমে তোমাদের মধ্যকার ভ্রাতৃত্ব-বোধকে আরও মজবুত করে দিলাম। হে আনসারগণ! তারা উট আর বকরী নিয়ে ফিরে যাবে আর তোমরা স্বয়ং আল্লাহর রাসূলকে নিজেদের সাথে নিয়ে নিজ কওমে ফিরবে। হে আনসারগণ! এরপরও কি তোমরা বলবে তোমরা অসন্তুষ্ট? তোমরা মনঃক্ষুণ্ণ? হে আনসারগণ! তোমরা আরও জেনে রাখ, যদি হিজরতের বিধান কার্যকর না হত তবে মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ হত তোমাদেরই একজন। যদি অন্য সকলে এক পথে চলে, আর আনসারগণ ভিন্ন পথে তবেও এই মুহাম্মাদ তোমাদের পথেরই পথিক। এখনও কি তোমরা তোমাদের প্রাপ্তি নিয়ে অসন্তুষ্ট? তোমরা তোমাদের অংশে স্বয়ং আল্লাহ্‌র নবীকে পেয়েও কি মনঃক্ষুণ্ণ?”
.
রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর হৃদয় চূর্ণ বিচূর্ণ করা কথাগুলো আনসারদের মনে গহীনে তীরের ফলার ন্যায় আঘাত করেছিল। এই আঘাতে রক্ত ঝড়ে না ঝড়ে অশ্রু। এই অশ্রু আনন্দ অশ্রু। এই অশ্রু হৃদয়ে প্রশান্তির বার্তা বয়ে আনে। সেদিন নবজাতকের ন্যায় আনসারদের এমন অশ্রুধারায় সকলের দাঁড়ি পর্যন্ত ভিজে গিয়েছিল। আনসারদের হাহাকারে মুহূর্তেই ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। সেদিনের এই কান্নার উৎপত্তি কোন অপ্রাপ্তি থেকে নয়; সুখ সাগর থেকেই এই কান্নার জন্ম।
.
ক্রন্দনরত অবস্থাতেই তারা প্রত্যেকে বলতে থাকে,
“ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা সন্তুষ্ট। আমরা স্বয়ং আল্লাহ্‌র রাসূল (ﷺ)-কে আমাদের অংশে পেয়ে সন্তুষ্ট।”
.
সকল প্রতিকূলতা পেরিয়ে এভাবেই সব সহায় সম্পত্তি ও যুদ্ধবন্দীদের বণ্টন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। সকল প্রকার সংশয়েরও হয় নিরসন। এমতাবস্থায়, হাওয়াযিন গোত্রের চৌদ্দ সদস্য বিশিষ্ট একটি দল ইসলাম গ্রহণের নিমিত্তে রাসূল (ﷺ)-এর খেদমতে হাজির হন। তাদের বাই’আত প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর তারা অনুনয় করে, অশ্রুসিক্ত নয়নে সাঁচ্চা দিলে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে আরজ করেন, তাদের সহায় সম্পত্তি ও পরিবার পরিজনকে ফিরিয়ে দেয়ার। তারা বলেন,
“আপনি যাদের বন্দী করেছেন, তারা আমাদের বাবা-মা, ভাই-বোন, খালা-ফুফুসহ সকলে নিতান্তই প্রিয় পরিজন। তাদের বন্দিত্ব আমাদের কাছে অবমাননাকর, বহুবিধ কষ্টের ও যন্ত্রণার।”
.
তাদের সকলের এহেন হৃদয় স্পর্শী বক্তব্য শুনে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,
“আমার সঙ্গে যে সকল লোক আছে তা তোমরা দেখতেই পাচ্ছ। তবে মনে রেখো, আমি সত্য অধিকতর বেশি ভালোবাসি। এবার বল, তোমাদের নিকট কি অধিক বেশি পছন্দনীয়? ধন সম্পত্তি নাকি সন্তান সন্ততি?”
.
সকলেই উত্তর দিল,
“আমাদের গোত্রীয় মর্যাদার সমতুল্য আর কোন কিছুই নেই।”
অর্থাৎ সন্তান সন্ততি তাদের কাছে ধন সম্পত্তি অপেক্ষা অধিকতর প্রিয়। এর প্রেক্ষিতে নবী (ﷺ) পুনরায় বলেন,
“যোহরের সালাত শেষে তোমরা দাঁড়িয়ে বলবে, আমরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে মুমিনদের জন্য এবং মুমিনদেরকে রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর জন্য সুপারিশকারী বানাচ্ছি। অতএব, আমাদের আটককৃতদের ফিরিয়ে দিন।”
.
যোহরের সালাত শেষে তারা সকলেই অনুরূপ বলল। এর প্রতি উত্তরে রাসূল (ﷺ) বলেন,
“এই অংশের মধ্যে যা আমার জন্য এবং যা বনু আব্দুল মুত্তালিবের জন্য বরাদ্দ রয়েছে তা তোমাদের ফিরিয়ে দিলাম। এই প্রেক্ষিতে আমি অন্যান্য ব্যক্তি ও গোত্রের বক্তব্য জানতে আগ্রহী।”
.
রাসূল (ﷺ)-এর এই বক্তব্যের ফলে আনসার ও মুহাজিরগণ নিজেদের অংশ ফিরিয়ে দিয়ে দেন। কয়েকটি গোত্র আটককৃতদের ফিরিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এমতাবস্থায় নবী (ﷺ) পুনরায় বলেন,
“এই লোক সকল গণিমত বণ্টনের পর এসেছে এবং ইসলাম গ্রহণ করেছে। আমি তাদের আগমনের অপেক্ষাতেই গণিমত বণ্টন করতে বিলম্ব করছিলাম। তথাপি, আমি তাদের সত্য বলার অধিকার প্রদান করলাম। তাদের কাছে পরিবার পরিজন ভিন্ন অন্য কিছু অধিকতর গুরুত্ব রাখে না। অতএব, যাদের কাছে আটককৃত রয়েছে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হবে অতি উত্তম কাজ, এমনকি যারা তাদেরকে নিজেদের কাছে রাখতে চায় সেটাও অপরাধ হবে না। তবে আগামীতে সবার আগে যে সরকারী সম্পদ অর্জিত হবে ইনশাআল্লাহ্‌ সেখান থেকে ফেরত দানকারীকে একের বদলে ছয়ের সমপরিমাণ সম্পদ প্রদান করা হবে।”
.
রাসূল (ﷺ)-এর এহেন প্রস্তাবের পর সকলের মধ্যে ফিসফিস শুরু হয়ে যায়। কারও কোন বক্তব্য স্পষ্ট না হওয়ার দরুন রাসূল (ﷺ) পুনরায় বলেন,
“আমি তোমাদের বক্তব্য স্পষ্ট ভাবে বুঝতে পারছি না। সুতরাং তোমরা সকলেই ফিরে যাও। আমি গোত্র প্রধানদের কাছ থেকে এই বিষয়ে জেনে নেব।”
.
পরবর্তীতে সকলেই তাদের নিকট আটককৃত যুদ্ধবন্দীদের ফিরিয়ে দেয়। তৎকালীন সময়ে যেখানে যুদ্ধবন্দীদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা ইতিহাসের নির্মমতম কালো অধ্যায় সেখানে রাসূল (ﷺ) তাদের মুক্ত করে পরিবার পরিজনের হাতে তুলে দেন। এটাই ছিল রাসূল (ﷺ)-এর ইনসাফ। এই ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নিমিত্তেই সংঘটিত হয়েছিল মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসের সকল যুদ্ধ। আফসোস আমরা সেই নবী (ﷺ)-কে ও তার আদর্শ থেকে যোজন যোজন দূরে।
.
শুধু তাই নয়, এই মহান আদর্শের প্রচারক নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর অবমাননায় আমাদের অনেকের হৃদয়েই রক্তক্ষরণ হয়না। যাকে নিজ জীবন কিংবা ইহজাগতিক যেকোনো কিছু থেকে বেশি ভালোবাসতে না পারলে ঈমান পরিপূর্ণ হয়না, শেষ বিচার দিবসে যিনি ভিন্ন অন্য কেউ শাফায়াতের অধিকার পাবে না; সেই মহান নবী (ﷺ) সম্পর্কে জানতে, তার প্রচার করা শ্রেষ্ঠ আদর্শকে উপলব্ধি করতে এবং তা নিজের মধ্যে ধারণ করতে কিসের এত অনীহা? আমরা যারা নিজেদের মুসলিম বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, সেই আমরাই আমাদের আদর্শের প্রচারক সম্পর্কে কতটুকু জানি? এটা কি আমাদের জন্য লজ্জার নয়?
.
যে উম্মাহর শ্রেষ্ঠ সন্তানেরা অগণিত ধন সম্পদ উপেক্ষা করে নবী (ﷺ)-কে নিজেদের অংশে পেয়ে খুশিতে নবজাতক শিশুর মত কান্না করছিল; আমরা তো তাদেরই উত্তরসূরি। তবে কোন সে অপশক্তির বলে আমাদের ও তাদের অনুভূতির জগতে সুউচ্চ দেয়াল তৈরি হয়েছে? আরও তৈরি হয়ে এত বিস্তর ফারাক। তবে কি নবী (ﷺ) এবং তার প্রচারিত শ্রেষ্ঠ আদর্শ থেকে দুনিয়াবি অর্জন আমাদের কাছে বেশি বড় হয়ে গেল?
.
প্রতিনিয়ত এতশত অর্জনের মিছিলে যোগ দিয়ে আজ আমরা আমাদের নবী (ﷺ)-কে পর্যন্ত ভুলে গিয়েছি? ধন সম্পদ অর্জন মোটেই খারাপ কিছু নয়, কিন্তু মুসলমান হিসেবে নবী (ﷺ) এবং তার আদর্শ থেকে দূরে থাকা অবশ্যই অন্যায়। মৃত্যুর আগে অন্তত তার সম্পর্কে জেনে যাই, নতুবা কোন মুখ নিয়ে তার সামনে দাঁড়াব? যিনি ১৪০০ বছর পূর্বেও আমাদের কথা ভেবে ইয়া উম্মাতি! ইয়া উম্মাতি ধ্বনিতে অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরিয়েছেন; একমাত্র সেই তিনিই আবার শেষ বিচার দিবসে ইয়া উম্মাতি! ইয়া উম্মাতি বলে আমাদের আহ্বান করবেন। তবে আর কোন কারণে কালক্ষেপণ? চলুন না! আজ নয়, এখন থেকেই আমাদের প্রিয় নবী (ﷺ) সম্পর্কে জানি। তার আদর্শকে নিজের মধ্যে পরিপূর্ণ ভাবে ধারণ করি। মহান রব আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুন। সিরাত্বল মুস্তাকিমের পথে অবিচল রাখুন। সর্বোপরি, উম্মাতে মুহাম্মাদ হিসেবে কবুল করে নিন।

লেখকঃ
সাবেক কিংকর্তব্যবিমূড়

About the author
Fawzul Kabir

Leave a Comment